রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার, সামান্য রোগে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ০৯:৪৪ পিএম

রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার,  সামান্য রোগে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা

বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক ৯০ শতাংশ অকার্যকর বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী। ছবি : দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ।

‘সাধারণত সর্বোচ্চ মুমূর্ষু অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হওয়া উচিত, সেগুলো এখন হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডেই আমরা ব্যবহার করছি। এই রিজার্ভ অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর ব্যবহারের ফলে এক পর্যায়ে সর্দি-জ্বরেও অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করবে না। সামান্য অসুখ-বিসুখেই প্রাণ হারাতে হবে।’ 

সোমবার বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এই গবেষণার ফল প্রকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী এ কথা বলেন।

গবেষণায় দেখা যায় , দেশে মানুষের শরীরে প্রধান সংক্রমণ ঘটানো জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অকার্যকর হয়ে গেছে। এর প্রথম ও প্রধান কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত ব্যবহার। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

গত দেড় বছরে (জানুয়ারি ২০২২-জুন ২০২৩) রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিতে আসা ৭২ হাজার ৬৭০ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে এই গবেষণা করে মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগ।

‘সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ও কার্যকারিতার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা অনুষ্ঠানে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, বিশ্বে ২০১৯ সালে ব্যাকটেরিয়াজনিত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় একই কারণে বাংলাদেশে মারা গেছে প্রতি লাখে ১০০-২০০ মানুষ।

গবেষণায় আরও বলা হয়, দেশে অন্তত ৭৫ শতাংশ সংক্রমণ হয় টাইফয়েড, ই-কোলাই, স্ট্যাফাউরিয়াস, ক্লিবসিয়েলা ও সিউডোমোনাস ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। এসব ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাকসেস ও ওয়াচ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে অকেজো হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) রোগীদের যে অ্যান্টিবায়োটিকে চিকিৎসা চলত— তা এখন ওয়ার্ডের রোগীদেরও দিতে হচ্ছে। এতেই বোঝা যায় পরিস্থিতি কত খারাপের দিকে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে যেসব জীবাণু আগে শুধু আইসিইউতে মিলত, সেগুলো এখন কমিউনিটিতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়।

গবেষণায় বলা হয়, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়াজনিত অসুখ, সেপসিস এবং এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী প্রস্রাব সংক্রমণে সঠিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা পালন করা উচিত। এ ছাড়াও হাসপাতালজনিত সংক্রমণের হার বাংলাদেশে আশঙ্কাজজনক হারে বেড়ে চলেছে।

ডা. মো. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যেগুলো একেবারে শেষ ধাপ হিসেবে রিজার্ভ করে রাখা হয়েছে। সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একান্ত বিপদে না পড়লে এই রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিকগুলো একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু বর্তমানে এসব রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক অহরহ ব্যবহার করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মাইক্রো বায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার একটি গবেষণাপত্র তুলে ধরেন। এ ছাড়া মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগে ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত রোগীর নমুনায় সব ধরনের জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশ করেন বেসিক সায়েন্স ও প্যারা-ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্ট মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সক্ষমতা ও কার্যক্রম তুলে ধরেন বিএসএমএমইউর মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায়।

গবেষণায় অংশ নেওয়া রোগীদের নমুনার সব ধরনের জীবাণুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতার রিপোর্ট প্রকাশ করেন বেসিক সায়েন্স ও প্যারা-ক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. আহমেদ আবু সালেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও ইমিউনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার রায় রোগীদের নমুনায় জীবাণু শনাক্তকরণ ও জীবাণুসমূহের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সংবেদনশীলতা নির্ণয়ে বিএসএমএমইউতে থাকা প্রযুক্তিসমূহ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় এ বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন।

Link copied!