জুলাই ১৩, ২০২৫, ০১:৪৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ইসরায়েলি হামলায় ২৪ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে ওই এলাকার নাসের হাসপাতাল।
সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনিদের ভাষ্য, শনিবার খাবার নিতে গেলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।
তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, সেখানে তাদের গুলিতে কোনো হতাহতের খবর তাদের ‘জানা নেই’।
অন্যদিকে এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, হুমকি মনে করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয়েছিল।
উভয় পক্ষের দাবি বিবিসি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি। ইসরায়েল বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেয় না।
বিবিসির হাতে আসা এক ভিডিওতে দেখা যায়, নাসের হাসপাতাল চত্বরে একাধিক মৃতদেহের ব্যাগ, যার চারপাশে রক্তমাখা পোশাক পরা মানুষ ও নার্সরা দাঁড়িয়ে আছেন।
আরেকটি ভিডিওতে একজন বলেন, লোকজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিল, তখন পাঁচ মিনিট ধরে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এ ঘটনায় একজন প্যারামেডিক ইসরায়েলি সেনাদের বিরুদ্ধে ‘ঠান্ডা মাথায় হত্যার’ অভিযোগ তুলেছেন।
ওই ভিডিওগুলোর সত্যতাও বিবিসি যাচাই করতে পারেনি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স ঘটনার বিবরণ জানতে চেয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছে। তারা বলেছেন, লোকজনের মাথা ও দেহ লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে।
নাসের হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশও দেখার কথা লিখেছে রয়টার্স।
বিবিসি লিখেছে, গাজায় খাবার সংগ্রহের সময় প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে হতাহতের খবর আসছে।
গত মার্চে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল এবং তারপর হামাসের বিরুদ্ধে ফের সামরিক অভিযান শুরু করে। আর তাতে দুই মাস ধরে চলা যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়।
ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসকে চাপে ফেলতে চায়, যাতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেয়।
বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার মধ্যে মে মাসের শেষ দিকে অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়; এখনো সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির তীব্র সংকট রয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গাজাজুড়ে হাজার হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
জাতিসংঘের কিছু সহায়তা ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) মাধ্যমে একটি নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করেছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ভাষ্য, হামাস যেন ত্রাণ চুরি করতে না পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শুক্রবার বলেছে, তারা ত্রাণ সংশ্লিষ্ট ৭৯৮ হত্যার তথ্য নথিবদ্ধ করেছে। এর মধ্যে ৬১৫টি ঘটেছে জিএইচএফ পরিচালিত ত্রাণকেন্দ্র এলাকায়। বাকি ১৮৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে জাতিসংঘ ও অনান্য বহরের আশপাশে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, কিছু ঘটনায় বেসামরিক মানুষ ‘ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং ‘জনগণ ও (ইসরায়েলি) বাহিনীর মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ যতটা সম্ভব কমানোর জন্য’ তারা কাজ করছে।
জিএইচএফের অভিযোগ, জাতিসংঘ গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ভুল ও বিভ্রান্তিকর’ পরিসংখ্যান ব্যবহার করছে।
জিএইচএফের সাবেক এক নিরাপত্তা ঠিকাদার চলতি মাসের শুরুতে বিবিসিকে বলেন, তিনি একাধিকবার তার সহকর্মীদের ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাতে দেখেছেন, যারা কোনো হুমকি তৈরি করেনি। জিএইচএফ এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সীমান্ত অতিক্রম করে ইসরায়েলের ভেতরে আক্রমণ করে হামাস, যাতে ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই হামলার জবাবে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সেই থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৫৭ হাজার ৮২৩ জন নিহত হয়েছেন।