পেশিশক্তি ও প্রশাসন ব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম হতে দেবে না এনসিপি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম

পেশিশক্তি ও প্রশাসন ব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম হতে দেবে না এনসিপি

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ভয় দেখিয়ে পেশিশক্তি ও প্রশাসন ব্যবহার করে লুটেরা রাষ্ট্র কায়েম হতে দেবে না এনসিপি।

‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার’ অংশ হিসেবে আজ রোববার দুপুরে পিরোজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপি আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার পেয়েছি, চলুন সকলে মিলে আমরা এ সরকারকে সহযোগিতা করি এবং দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলি।’  

‘কিন্তু আমাদের এ আহবানে সবাই সাড়া দেয়নি। কেউ কেউ শুধু ক্ষমতা চাইছে, শুধু দ্রুত নির্বাচন চাইছে। সংস্কার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। কিন্তু আমরা বলেছি সংস্কার লাগবে, আওয়ামী লীগের বিচার লাগবে এবং একটি নতুন সংবিধান লাগবে,’ বলেন তিনি।

এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আমাদের সঙ্গে অনেক দল ও মত ছিল। কিন্তু দেশের সংস্কারের পক্ষে যদি কেউ না থাকে, আমরা যে গ্রুপটা রাজপথে নেমেছিলাম, আমাদের আহ্বানে আপনারা যারা রাজপথে নেমেছিলেন, তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা রাজপথ থেকে সরে যেতে পারি না। ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক না কেন রাজপথে থেকে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।’

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছিলাম রাষ্ট্রের সংস্কার লাগবে। আমরা পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা দুর্নীতির ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। আমাদের আন্দোলনের বিষয় ছিল বৈষম্য। বৈষম্যবিরোধী সমাজ গড়তে হবে। ধর্মের বৈষম্য, সমাজের বৈষম্য, শ্রমিকের বৈষম্যসহ সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।’

নাহিদ বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটেছিল যেই সরকার ১৬ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতায় টিকেছিল। মানুষের ওপর এমন কোনো নির্যাতন নেই যা ওই সরকার করে নাই। গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট, ভোটাধিকার হরণ সবকিছুই গত সরকার করেছে।’

বিগত তিন জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুধু সরকার কিংবা রাজনৈতিক দল নয়, মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ, আমলাতন্ত্র এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল বাহিনী। মানুষ জুলুমের সরকার থেকে পরিত্রাণের জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল।’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা আপনাদের কাছে এসেছি একটি নতুন দেশ গড়ার আহ্বান নিয়ে। শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করার আহ্বান নিয়ে। জুলাই ঘোষণাপত্র এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে।’

‘ধর্ম-বর্ণ ও মত নির্বিশেষে বাংলাদেশকে একটি ইনসাফের রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এনসিপি, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, দুর্নীতি থাকবে না এবং সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে,’ যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও দখলদারদের থেকে মুক্ত করার জন্য এনসিপির নেতৃবৃন্দ রাজপথে আছে, থাকবে এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কোনো শক্তি যদি মনে করে যে তারা ভয় দেখিয়ে, পেশিশক্তি ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজ ও লুটেরাদের রাষ্ট্র কায়েম করবে, এনসিপি সেটা হতে দেবে না।’

সীমান্তহত্যার সমালোচনা করে এবং বিজিবি সদস্যদের এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হলে সেখানে লংমার্চ করা হবে।’

এছাড়া ফেনীতে বন্যার ঘটনার উল্লেখ করে বন্যাকবলিত মানুষকে রক্ষার জন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রতি ইঙ্গিত করে নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে রক্তের মাধ্যমে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই সরকারকে বলব- তারা যেন সেই কথা ভুলে না যায়।’  

তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগস্টের এক দফা ঘোষণার মতো এ বছর ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নদী ভাঙনসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান এবং জুলাই ঘোষণাপত্র আদায়ের দাবিতে সমাবেশ করা হবে।’

Link copied!