দেউলিয়া হওয়ার পথে শতাধিক দেশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০২:১৮ পিএম

দেউলিয়া হওয়ার পথে শতাধিক দেশ

টালমাটাল হয়ে উঠেছে বিশ্ব অর্থনীতি। কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নাভিশ্বাস উঠেছে প্রায় সর্বত্রই। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা চড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। দেউলিয়া হওয়ার পথে এখন শতাধিক দেশ।

জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি বিভাগের প্রধান আচিম স্টেইনারের দাবি, যে কোনও দিন কোশাগার শূন্য হতে পারে অন্তত ৫০টি দেশ। বিশ্ব ব্যাংকের আশঙ্কা আরো বেশি। সংস্থাটির তালিকায় রয়েছে ১০৪টি দেশ, যারা দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। 

২০২২ সালে সবার প্রথমে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কার সরকার। ওই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই প্রায় একই পরিস্থিতি হয় নেপালের। তালিকায় নাম রয়েছে পেরু, তিউনিশিয়া, দুই সুদান, লেবানন, ঘানা, কেনিয়া, আর্জেন্টিনা, মিশর, তুরস্ক, পাকিস্তানেরও।

প্রশ্ন হল, কোনো রাষ্ট্রকে কখন দেউলিয়া বলে ঘোষণা করা হয়? বিশ্লেষকদের মতে, প্রথমত, কোনো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে গেলে তখন দেউলিয়ার ঘোষণা হয়। এবং দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রগুলির নিজস্ব কোষাগারে যখন কোনো অর্থই থাকে না, তখন দেউলিয়া হয়ে যায়।

কোনো দেশ দেউলিয়া হওয়ার প্রথম লক্ষণ হিসেবে জ্বালানি ও খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ডলারের বিপরীতে হু হু করে কমতে থাকে নিজস্ব মুদ্রার মান। ফলে খাবার বা জ্বালানির মতো নিত্যপণ্যের জন্য রাস্তায় নেমে আসে জনতা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় লুটপাট। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধের আকার নিতেও দেখা যায়।

শ্রীলঙ্কার মতোই সাম্প্রতিক অতীতে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া পেরু ও আর্জেন্টিনার ভয়ংকর ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব। দক্ষিণ আমেরিকার এই দুই দেশে খাবার ও জ্বালানির জন্য সাধারণ মানুষ সহিংসতায় জড়িয়েছে।

দেউলিয়া রাষ্ট্রের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক ঋণের জালে জড়িয়ে থাকে এই সমস্ত দেশ। উদাহরণ হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকা বা পাকিস্তানের কথা বলা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলির জিডিপির হার হয় ঋণাত্মক। গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবার এই চিত্র দেখা গেছে কেনিয়াতে।

খাদ্য সংকটের পরেই আসবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপের ফ্রান্স বা জার্মানির মতো উন্নত দেশে জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করে আসছিল রাশিয়া।

কিন্তু সংঘর্ষ বাধতেই রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপ। ফলে রাতারাতি বন্ধ হয়ে যায় মস্কো থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি।

আরও পড়ুন: ভিওএ জরিপ: ৪৪.৭% মানুষ মনে করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ‘আগের সরকারের তুলনায় খারাপ করছে’

নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্ব বাজারেও রাশিয়ার তেল বিক্রি হোঁচট খায়। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেট্রোপণ্যের দাম। এর ওপর ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধও তেলের বাজারে বাড়তি অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। অবশ্য এরও আগে থেকে করোনাভাইরাস মহামারির সময় থেকেই জ্বালানি তেলের বাজার ও সরবরাহে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে বিশ্বের ১৪৮টির মধ্যে ১৩৫টি দেশের উপর রয়েছে অস্বাভাবিক ঋণের বোঝা। এর মধ্যে আবার ৩৯টি রাষ্ট্র মহামারির পর তিন গুণের বেশি ঋণ নিয়েছে। এই ৩৯টির মধ্যে ২০টি রাষ্ট্র কখনোই ঋণ শোধ করতে পারবে না বলে মনে করছে বিশ্ব ব্যাংক।

Link copied!