জেন-জি বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট আত্মগোপনে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিল মাদাগাস্কারে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:২২ পিএম

জেন-জি বিক্ষোভে প্রেসিডেন্ট আত্মগোপনে, সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিল মাদাগাস্কারে

ছবি: সংগৃহীত

ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপ দেশ মাদাগাস্কারে তরুণদের কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রেজোয়েলিনার কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনীর একটি প্রভাবশালী ইউনিট।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর পারসোনেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড টেকনিকাল অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেস কর্পস (সিএপিএসএটি) ইউনিটের প্রধান কর্নেল মিকায়েল রান্দ্রিয়ানিরিনা বলেছেন, সামরিক বাহিনীই সরকার গঠন করে দেশ চালাবে, এবং দুই বছরের মধ্যে নির্বাচন দেবে।

তিনি নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও স্থগিত ঘোষণা করেছেন, জানিয়েছে বিবিসি।

“জেন-জি বিক্ষোভকারীরাও এই পরিবর্তনের অংশ হবে, কেননা আন্দোলনটি রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে, আমাদেরকেও তাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে,” বলেছেন রান্দ্রিয়ানিরিনা।

প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার ক্ষমতাচ্যুতির খবরে মঙ্গলবার রাজধানী আন্তানানারিভোতে সেনা সদস্য ও বিক্ষোভকারীদের উল্লাস করতে দেখা গেছে, হাজারো মানুষকে জাতীয় পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে।

মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সিএপিএসএটি-ই সবচেয়ে প্রভাবশালী ইউনিট। ২০০৯ সালে রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসার পর এই ইউনিটটি তাকে সমর্থন দিয়েছিল, কিন্তু শনিবার তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।

মাদাগাস্কারের সাংবিধানিক আদালত কর্নেল রান্দ্রিয়ানিরিনাকে দেশটির নতুন নেতা হিসেবে ঘোষণা করলেও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাজোয়েলিনাই এখনও দায়িত্বে আছে, এবং যা ঘটছে তা মূলত ‘অভ্যুত্থান চেষ্টা’।

রাজোয়েলিনা কোথায় আছেন তা অজানা। তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনী সদস্য ও রাজনীতিকরা তাকে প্রাণে মেরে ফেলতে চেষ্টা করায় তিনি ‘নিরাপদ জায়গায়’ আশ্রয় নিয়েছেন।

সিএপিএসএটি বলেছে, তারা রাজোয়েলিনাকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত ছিল না।

ফ্রান্সের একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়েছেন বলে খবর মিললেও বিবিসি তা নিশ্চিত হতে পারেনি।

মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদাগাস্কারে ‘সাংবিধানিক শৃঙ্খলার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করতে’ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

কর্নেল রান্দ্রিয়ানিরিনা বিবিসিকে বলেছেন, “মাদাগাস্কার এখন এমন একটি দেশ যেখানে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। বিশৃঙ্খলার কারণ এখানে কোনো প্রেসিডেন্ট নেই, তিনি বিদেশে চলে গেছেন।”

দেশজুড়ে পানির সঙ্কট ও লোডশেডিংয়ের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ তরুণরা কয়েক সপ্তাহ আগে ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপদেশটিতে আন্দোলনে নামে। পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বেকারত্ব, ব্যাপক দুর্নীতি ও জীবনযাপনের খরচ বৃদ্ধির মতো নানান বিষয়। এক পর্যায়ে এটি বৃহত্তর সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হলেও মাদাগাস্কারের সরকার হতাহতের এই সংখ্যাকে ‘গুজব ও অপতথ্য’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।

উদ্যোক্তা ও একসময়কার ডিস্কোজকি রাজোয়েলিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেসময় তিনি ছিলেন আফ্রিকার সবচেয়ে কমবয়সী শাসক। গেল দশকের শেষভাগে তিনি ফের প্রেসিডেন্ট পদে ফেরেন।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তার জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। রাজোয়েলিনা অবশ্য শুরু থেকেই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।

শেষদিকে তিনি জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখতেও চেয়েছিলেন। আইনপ্রণেতারা যেন তাকে ক্ষমতাচ্যুত না করতে পারে সেজন্য তিনি পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন।

কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি, আইনপ্রণেতাদের সিংহভাগ তার বিরুদ্ধে ভোট দেন, এমনকি রাজোয়েলিনার পার্টি ইরমারের অনেক সদস্যও তাকে যুক্ত হন। যার দরুন বিপুল ভোটে তিনি অভিশংসিত হন।

রাজোয়েলিনা ওই ভোটের ফলকে প্রত্যাখ্যান করে তাকে ‘অবৈধ ও খামাখা’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।

আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) মাদাগাস্কারের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর ‘হস্তক্ষেপের’ ব্যাপারে সতর্ক করেছে এবং বলেছে, অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তনের যে কোনো চেষ্টা তারা প্রত্যাখ্যান করবে।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মাদাগাস্কারের পরিস্থিতিকে ‘গভীর উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়েছেন।

দ্বীপদেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এমনিতেই নানান রাজনৈতিক উত্থান-পতন দেখেছে। দুর্লভ খনিজে সমৃদ্ধ মাদাগাস্কার পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ, তাদের ৩ কোটি জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে বলে বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া তথ্য বলছে।

Link copied!