সেনা অফিসারদের বিচার সেনা আইনেই চায় ‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৩:৩৬ পিএম

সেনা অফিসারদের বিচার সেনা আইনেই চায় ‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যে সেনা কর্মকর্তাদের নাম এসেছে, তাদের বিচার সেনা আইনেই চায় এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।

সেনাবাহিনীর সাবেকদের এই সংগঠন বলছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে বিচার হলে ভবিষ্যতে অপরাধীরা ‘পার পেয়ে যেতে পারে’। ‘প্রয়োজনে’ সেনা আইন সংশোধন করে তার আওতায় জড়িতদের বিচার করা হোক।

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, “যে ধরনের গুম-খুন হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে, সে যদি আমার আপন ভাইও হয়, আমি তার ফাঁসি চাইব এবং সেটা জনসম্মুখে চাইব। কিন্তু আমরা এই বিচার করতে গিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো ধরনের কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।”

তার ভাষ্য, আইসিটি আইন ও সেনা আইন দুটোই সংবিধান স্বীকৃত। সংবিধানে মৌলিক অধিকার রক্ষার বিষয় আছে।

“কিন্তু আইনের সংজ্ঞার সাথেই আইসিটি আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক। কোনো বিষয় সাংঘর্ষিক হলে সে ক্ষেত্রে আইসিটি আইনকেই প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় প্রসিকিউশনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এরপর শনিবার সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান যে ৩২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বর্তমানে চাকরিরত ১৫ জনকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ওই তথ্য জানানোর পরদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা সদস্যদের বিচার ও তাদের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে নানা আলোচনার মধ্যে এবার এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন তাদের মতামত তুলে ধরল।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা, চিলি, মেক্সিকো ও তুরস্কের ‘ডিকটেটরশিপের’ উদাহরণ টেনে বলেন, “এই যে ডিকটেটরদের বিচারগুলা হয়েছে, সেই বিচারগুলা কিন্তু সেনা আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে হয়েছে। 

“সেখানে ভবিষ্যতে যদি এই অভিযুক্তরা কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ করে বসেন, তখন কিন্তু তারা পার পেয়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। কারণ এই আদালত, এই কোর্ট, এই চেয়ার, এই জাজেসরা কিন্তু একসময় আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছে যে উনি দোষী, উনি সুদখোর। আবার এই কোর্টেই বলা বলছে যে হল উনি নিরাপরাধ।

“ভবিষ্যতে (এই বিচার) যেন কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন না হয় এবং এই যে অপরাধীরা, এই অপরাধীরা যাতে পার না পায়, সেজন্যই সেনা আইনের মাধ্যমে যদি বিচার হয়, তাহলে কিন্তু এই অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।”

এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, “সেনা আইনে বিচার হলে এখন পর্যন্ত কোনো অফিসার তার বিরোধিতা করতে পারেনি। এদেশের জনগণের সেনাবাহিনীর উপর এখনো সম্পূর্ণ আস্থা আছে এবং ভবিষ্যতে আস্থা থাকবে।”

‘আর কোনো সেনা সদস্যকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা নেই’–সরকারের এমন বক্তব্যেরও সমালোচনা করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সাইফ বলেন, “তাহলে যাদেরকে এখন একিউজ করা হয়েছে বা গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হয়েছে, সেটা কি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে? যখন কোনো একটা বিষয় তদন্ত করতে যাব, আরেকজন ক্রিমিনাল বের হবে। তাই এখানে ফুল স্টপ দেওয়া যাবে না।”

গুমের বিচার সেনা আইনে সম্ভব কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তার ভাষ্য, “সেনা আইনে গুম বলে কোনো শব্দ নেই। কিন্তু কোনো অপরাধ যদি আইনে না থাকে, সেটার বিচার কীভাবে করা যায় সেটি বলা আছে। দ্বিতীয়ত সেনা আইন কোরআন না বাইবেল নয়, যে সেটা সংশোধন করা যাবে না।”

এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মনে করছে, একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে যদি আইসিটি অ্যাক্ট সংশোধন করা যায়, তাহলে প্রয়োজনে সেনা আইনও সংশোধন কর যায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেনা কর্মকর্তাদের বিচার হলে সমস্যা কোথায়–এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সংবিধানের আর্টিকেল ৫২ অনুযায়ী আইন পরিবর্তন করার একমাত্র অথরিটি হচ্ছে সংসদ। আমাদের সংসদ যদি না থাকে তাইলে স্পেশাল অর্ডারে করতে পারে যেটা এখন করছে। এটাতে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু পরবর্তী সরকার যদি আসে এবং ওখানে সংসদে যদি ওরা যেই আইনটা অ্যাপ্রুভ না করে তখন এই যে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে।

“সেজন্য এমনভাবে বিচার করা উচিত যাতে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা না যায়। এখানে (আইসিটি আইন) সংবিধানে অনেকগুলো আর্টিকেলের সাথে সাংঘর্ষিক বলেই আজকে এ প্রশ্নটা এসেছে। সেজন্য আমাদের অ্যাসোসিয়েশন থেকে আবারও বলছি, তাদের বিচার জনসম্মুখে হোক এবং জনসম্মুখে ফাঁসির রায় কার্যকর হোক।”

Link copied!