ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ‘ধ্বংস’ হবে: জর্ডানের বাদশাহ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ‘ধ্বংস’ হবে: জর্ডানের বাদশাহ

ছবি: সংগৃহীত

চলমান শান্তি প্রক্রিয়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে না হলে মধ্যপ্রাচ্য ধ্বংস হয়ে যাবে বলে সতর্ক করেছেন জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।

মিসরের শার্ম আল-শেখে, এই অঞ্চলের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০-দফা শান্তি পরিকল্পনার ওপর একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে, বিবিসি প্যানোরামার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই কথা বলেন।

এমন একটি দিনে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেদিন হামাস গাজায় আটক শেষ জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিদের ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে মুক্তি দিয়েছে।

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, “যদি আমরা এই সমস্যার সমাধান না করি, যদি আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য একটি ভবিষ্যৎ এবং আরব ও মুসলিম বিশ্ব এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি সম্পর্ক খুঁজে না পাই, তাহলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাব।”

বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার অনেক ব্যর্থ প্রচেষ্টা অতীতেও দেখা গেছে।

তার মতে, একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান খোঁজার মাধ্যমে- ইসরায়েলের পাশাপাশি পশ্চিম তীর এবং গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন-ই এই পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান।

“আমি আশা করি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমরা পরিস্থিতি ঠিক করতে পারব, কারণ যদি আমরা এর সমাধান না করি, তাহলে আমাদেরকে আবারও এই সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে,” বলেন বাদশাহ আবদুল্লাহ।

বর্তমান ইসরায়েলি সরকার বারবার দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে, এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

তবে, একই জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার শান্তি পরিকল্পনার রূপরেখা তৈরির জন্য বাদশাহ আবদুল্লাহ এবং অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের একটি বৈঠকে ডেকেছিলেন।

“তিনি আমাদের সকলকে যে বার্তাটি দিয়েছিলেন তা হলো- ‘এটা বন্ধ করতে হবে, এটা এখনই বন্ধ করতে হবে’ এবং আমরা বলেছিলাম, আপনি জানেন মি. প্রেসিডেন্ট, যদি কেউ এটা করতে পারে তাহলে তিনি আপনি,” বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন।

ইরানের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং কাতারে হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলাসহ গত দুই বছরের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে বাদশাহ আবদুল্লাহ বলেন, “আমরা আঞ্চলিক, অথবা উত্তর-দক্ষিণে বিভাজিত হয়ে সংঘাতে জড়ানো, যা সমগ্র বিশ্বকেই প্রভাবিত করতো, যার কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি?”

নেতানিয়াহুর কথা বলতে গিয়ে জর্ডানের এই নেতা বলেন, তিনি “তার কথায় বিশ্বাস করেন না।” তবে তিনি বিশ্বাস করেন যে এমন কিছু ইসরায়েলি আছেন যাদের সাথে আরব নেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে পারেন।

হামাস এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলীর অধীনে গাজার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে বাদশাহ বলেন, “কাতার এবং মিশরের মতো দেশগুলো তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যারা মনে করে, যে এই চুক্তি সবাই মেনে চলবে। তারা খুবই আশাবাদী,” বলেন তিনি।

কিন্তু রাজা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা চুক্তির “বিষয়বস্তুর ভেতরেই শয়তান রয়েছে” এবং গাজায় একবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমাদের আলোচনায়, তিনি জানেন যে এটি কেবল গাজা নয়, এটি কেবল একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বিষয় নয়। তিনি পুরো অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার দিকে তাকিয়ে আছেন। ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ না থাকলে যা ঘটবে না,” বলেও মনে করেন মি.আব্দুল্লাহ।

জর্ডানের অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৯৪ সাল থেকে ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তি চুক্তি রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এছাড়া কিছু নিরাপত্তা ইস্যুতেও দেশ দুটি সহযোগিতা করে।

বর্তমান রাজার প্রয়াত পিতা বাদশাহ হুসেন এবং ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিন এই শান্তি চুক্তিতে সম্মত হন। পরের বছর এক ইহুদি চরমপন্থি রবিনকে হত্যা করে।

নিজের জীবদ্দশায় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র সহ একটি চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি দেখতে পাবেন, এটি বিশ্বাস করেন কিনা? বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাব দেন মি. আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, “আমাকে করতেই হবে, কারণ বিকল্পের অর্থ সম্ভবত এই অঞ্চলের শেষ হবে। আমার মনে আছে, আমার বাবা তার জীবনের শেষের দিকে বলতেন, ‘আমি আমার সন্তানদের এবং তাদের সন্তানদের জন্য শান্তি চাই।’ আমার দুই নাতি-নাতনি আছে; তারা সেই শান্তির যোগ্য। তাদের জন্য কতই না খারাপ হবে যদি তারা বড় হয়ে একই কথা বলে যা আমার বাবা বহু বছর আগে বলেছিলেন?”

“এবং আমি মনে করি এটাই আমাকে এবং এই অঞ্চলে আমাদের অনেককে উৎসাহিত করে যে, শান্তিই একমাত্র বিকল্প। কারণ যদি তা না ঘটে, তাহলে পশ্চিমারা, বিশেষ করে আমেরিকা, কতবার এতে জড়িয়ে পড়ে? ৮০ বছর হয়ে গেছে। এবং আমার মনে হয় আমাদের সকলের এখন বলার সময় এসেছে যে যথেষ্ট হয়েছে।”

হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৩ সালের ০৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি স্থাপনের এই প্রক্রিয়াকে একটি প্রকৃত সম্ভাবনার মুহূর্ত বলেই মনে করেন বাদশাহ আবদুল্লাহ। যদিও, এক্ষেত্রে ইতিহাস আশার খুব বেশি কারণ দেয় না।

Link copied!