অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
কোরআন ‘অবমাননার’ অভিযোগে গ্রেপ্তার ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী অপূর্ব পালকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আসামির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন।
তবে অপূর্বের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না, তিনি আদালতকে বলেছেন, মাঝে মাঝে তার ‘ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়’।
কোরআন তেলাওয়াত করে শুনানি শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন।
শুনানিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তরর্তীকালী সরকার যখন নির্বাচনের দিকে হাঁটছে, তখন দেশি-বিদেশি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটা ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি। এটা সেটার অংশ।
“আমাদের ধর্ম প্রত্যেক ধর্মের প্রতি সহানুভূশীল। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ন্যাক্কারজনক কাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার জন্য, দেশে দাঙ্গা বাধানোর জন্য এ কাজ করছে। যা অন্য কোনো ধর্মের লোক সাহস পাবে না।”
রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, “এ আসামি কার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। তার সঙ্গে ষড়যন্ত্রকারী কারা? কারা কারা তাকে শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে? প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত কি না? এসব জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।”
শুনানিতে অপূর্ব পালের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আসামির কিছু বলার আছে কী না জানতে চায় আদালত।
তখন অপূর্ব পাল আদালতকে বলেন, “আমার পেছনে কেউ নাই। যখন এ ঘটনা ঘটেছে, তখনকার কিছু আমার মনে নাই। এই রকম সমস্যা মাঝে মাঝে দেখা দেয়। আমি মাঝে মাঝে ভুলে যাই। একদিন মসজিদে ঢুকার পর মিম্বারে জুতা রেখেছিলাম। মুয়াজ্জিন আমাকে জুতা রাখার কথা জিজ্ঞাস করেছে। কিন্তু আমার মনে নাই। মাঝে মাঝে আমি ভুলে যাই।”
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আরেক আইনজীবী হারুন অর রশীদ আদালতকে বলেন, “আমাদের দেশের হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা বাঁধিয়ে দিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এর সাথে বড় কোনো গ্যাং জড়িত। তার সর্বোচ্চ রিমান্ডের প্রার্থণা করছি।”
গত ৯ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই চাঁদ মিয়া অপূর্বকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে পেতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ডের শুনানির জন্য এদিন ঠিক করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, “এ আসামি কোরআন অবমাননার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনার দিন ও সময়ে ঘটনাস্থলে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরীফ হাতে করে নিয়ে এসে সবার সামনে হাত থেকে ফ্লোরের উপর ফেলে পা দিয়ে পদদলিত করে ধর্মের বিশ্বাসের অবমাননা করে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হানার কথা স্বীকার করেছে। বিষয়টি দেশব্যাপী বহুল আলোচিত ঘটনা যা দেশের সকল ধরনের মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে।”
ঘটনাটি কারো ইন্ধনে বা কোন সম্প্রদায়েরে উস্কানিতে এবং দেশে নৈরাজ্য ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য হয়েছে কী না, তা জানতে অপূর্বকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উদঘাটনের সম্ভবনা রয়েছে। সেজন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
কোরআন অবমাননার ঘটনায় অপূর্বর বিরুদ্ধে গত ৫ অক্টোবর ভাটারা থানার এসআই হাসমত আলী মামলাটি দায়ের করেন।
গত ৪ অক্টোবর রাতে কয়েকটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেসবে অপূর্ব পাল কোরআন অবমাননা করেছেন বলে বিভিন্ন পোস্টে অভিযোগ তোলা হয়। ওই শিক্ষার্থীর ফেইসবুক পোস্ট শেয়ার করে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়। এর মধ্যেই রাত ১টার দিকে অপূর্ব পালের বাসার সামনে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুব্ধ অনেকেই।
খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করে ভাটারা থানা পুলিশ। প্রথমে তাকে আটক করতে জনতার সহায়তা চায় পুলিশ, জনতার তরফেও পুলিশকে সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
একপর্যায়ে পুলিশ অপূর্বকে আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা অপূর্বকে মারধর শুরু করে। জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ আসে।
মারধরের মধ্যেই পৌনে ৩টার দিকে অপূর্বকে হেফাজতে নিতে সক্ষম হয় পুলিশ।
পরদিন এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অপূর্বকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
অপূর্ব নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া, কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি আগেও সাময়িকভাবে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন একই বিভাগের প্রভাষক আসিফ বিন আলী। মামলা হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অপূর্ব ‘স্থায়ী বহিষ্কার’ করেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।