তালেবানের ক্ষমতা সম্পর্কে সবাই ভুল ধারণা করেছিল: ব্রিটিশ সেনা প্রধান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১, ০৬:২২ এএম

তালেবানের ক্ষমতা সম্পর্কে সবাই ভুল ধারণা করেছিল: ব্রিটিশ সেনা প্রধান

তালেবান বাহিনীর ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা সকলে ভুল ধারণা করেছিলাম। কেউ ভাবতেও পারেনি আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতা এত দ্রুত তালেবানের দখলে চলে যাবে। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিবিসির অ্যান্ড্রু মার শোতে কথা বলার সময় যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেন স্যার নিক কার্টার এ মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, তালেবানের আফগানিস্তান দখলের গতিই আমাদের অবাক করে দিয়েছিল এবং আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তালেবান কোন পথে এগোচ্ছে, আমরা তা বুঝতে পারিনি।

তাহলে কি সামরিক গোয়েন্দারাও তালেবানদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে। এটি শুধু সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভর করেনা।’

সর্বশেষ মাত্র সপ্তাহখানেক আগে ২০ বছরের সামরিক অভিযান শেষে ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল।

আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমারা হঠাৎ যেভাবে সরে এসেছে, এতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তানে তাদের পরিচালিত অভিযান সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘ ২০ বছরের অভিযানের পরও  কিভাবে তালেবান এত দ্রুতগতিতে দেশের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পেরেছে?

স্যার নিককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তালেবানদের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী এতটা কিভাবে ভুল হতে পারে?

এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি প্রত্যেকেই ভুল বুঝেছে, এটাই সত্যি কথা। আমার মনে হয়, এমনকি তালেবানরাও আশা করেনি যে তাদের অবস্থান এত দ্রুত বদলে যাবে।’

তিনি আরও বলেছেন: ‘আমি মনে করি কেউ বুঝতে পারেনি, যে আফগান সরকার এতটা ভঙ্গুর এবং দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ড এতটা নাজুক ভূমিকা পালন করবে।’

তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে তালেবান একটি নতুন সরকার ঘোষণা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, অর্থাৎ বিদেশী শক্তিগুলোকে তালেবান প্রশাসনের সাথে মোকাবিলাটা আরও কষ্টকর হয়ে যাবে।

আফগানিস্তান থেকে বাইডেন প্রশাসনের অকস্মাৎ সেনা প্রত্যাহার, পশ্চিমা বিশ্বের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমা বিশ্বের পরবর্তী পদক্ষেপ

পশ্চিমা নেতারা আফগানিস্তানের তাদের ২০ বছরের সামরিক তৎপরতাকে একটি সাফল্য হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছেন এবং করবেন। তবে তালেবান মনে করে পশ্চিমাদের সাথে যুদ্ধে তারাই জয়ী হয়েছে।

আফগানিস্তানে তাদের ভাবমূর্তির যে ক্ষতি হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে আমেরিকা এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের বেশ কিছুটা সময় লাগবে। তালেবানের সাথে সম্পর্ক আগামিতে তাদের মাথাব্যথার বড় একটি কারণ হবে।

কিন্তু গত ২৫শে আগস্ট জার্মান পার্লামেন্টে এক ভাষণে চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল বলেন,`আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে যে অর্জন হয়েছে তা যতটা সম্ভব ধরে রাখা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।'

তার আগেই ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল বলেন,`নতুন আফগান শাসকদের সাথে আমাদের কী সম্পর্ক হবে সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনও আসেনি।'

তিনি বলেন, এই সম্পর্ক নির্ভর করবে `নতুন শাসকদের কাজ এবং আচরণের ওপর।'

তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং বিশেষ করে নারী শিক্ষা এবং নারী অধিকার এবং সেই সাথে সন্ত্রাস এবং মাদক চোরাচালান নিয়ে তালেবান কী করে ইউরোপ সেদিকে নজর রাখবে।

আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীর নতুন ঢেউ প্রশমনও পশ্চিমা দেশগুলোর অন্যতম একটি লক্ষ্য।

আরেকটি বড় চিন্তা সন্ত্রাসের হুমকি। যদিও আমেরিকা এবং তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে তাতে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী যেন আফগানিস্তানকে ব্যবহার না করতে পারে তালেবান তা নিশ্চিত করবে, কিন্তু সেই ভরসা পশ্চিমারা করতে পারছে না। বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা প্রমাণ করে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগানিস্তানে তৎপর।

সূত্র: বিবিসির ইনফোগ্রাফ

তালেবানের সঙ্গে আলোচনা

১৯৯০ এর দশকে তালেবান যখন প্রথম আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল, তখন মাত্র তিনটি দেশের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল: পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। কিন্তু এরপরও নাকি সৌদি আরবের কিছু ব্যক্তির তরফ থেকে গোপনে আরও বহু বছর ধরে তালেবানের কাছে অর্থ সাহায্য গেছে। সৌদি কর্মকর্তারা অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অর্থ সাহায্য দেয়ার কথা অতীতে অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, কোন ব্যক্তিগত অর্থ সাহায্য যাতে তালেবানের কাছে যেতে না পারে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও রয়েছে।

আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের অব্যাহত উপস্থিতির বিরুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রেও যখন জনমত প্রবল হতে থাকল, তখন এ নিয়ে কূটনীতির সুযোগ খুলে গেল অন্য কিছু দেশের জন্য।

কাতার এবং তুরস্কের সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পথে।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ করতে চাইছিলেন, তখন কাতার ২০১১ সাল হতে তালেবান নেতাদের জন্য এক সম্মেলনের আয়োজন করে শান্তি-প্রচেষ্টা নিয়ে কথা বলার জন্য।

এটি ছিল এক বিতর্কিত প্রক্রিয়া। দোহার চোখ ঝলসানো একটি এলাকায় যখন পত পত করে উড়ছিল তালেবানের পতাকা, তখন এতে অনেকে আহত বোধ করেছেন (যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে পরে তালেবানের পতাকার খুঁটির উচ্চতা কমিয়ে দেয়া হয়েছিল)। তবে এর ফলে কাতারিরা একটি নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের সুযোগ পেয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্বের মাঝখানে থাকা কাতার এরকম একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিল তিন দশক ধরে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে গত বছর দোহা শান্তি আলোচনায় শেষ পর্যন্ত যে সমঝোতা হয়, তাতে এ বছরের মে মাস নাগাদ মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। তবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দায়িত্ব নেয়ার পর এই সময়সীমা বাড়িয়ে দেন এবছরের ১১ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সূত্র: বিবিসি।

Link copied!