জুলাই ৩৩

দেশজুড়ে বিক্ষোভ, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম

দেশজুড়ে বিক্ষোভ, ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

গত বছরের ২ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ৩ আগস্ট দেশব্যাপী বিক্ষোভ এবং ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেন। 

এই কর্মসূচি আসে কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার দাবিসহ নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে।

আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার ওই রাতে হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠিয়ে সবাইকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে আহ্বান জানান। একই বার্তা শেয়ার করেন আন্দোলনের আরেক মুখপাত্র ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। অন্যদিকে আবদুল হান্নান ফেসবুক লাইভে ঘোষণা দেন যে ৪ আগস্ট থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হবে।

হান্নান বলেন, কেউ ট্যাক্স বা গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের বিল দেবে না, সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবন ও রাষ্ট্রপতি ভবন বঙ্গভবনে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

তিনি জনগণকে সরকারের কার্যক্রম অচল করে দেওয়ার আহ্বান জানান।

এর আগে, ১ আগস্ট ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি পাওয়া ছয় ছাত্রনেতা—নাহিদ ইসলাম, সর্জিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম এবং আবু বকর মজুমদার—এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং যারা নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করেন।

পুলিশ দাবি করেছিল, ছাত্রনেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নেতারা বলেন, তারা কোনো নিরাপত্তা চাননি এবং এই হেফাজত ছিল অসাংবিধানিক ও বেআইনি।

তারা আরও অভিযোগ করেন, তাদের জোরপূর্বক অনশন করানো হয় এবং পরিবারকে তা জানানো হয়নি। সেইসঙ্গে ডিবি অফিস থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের যে ভিডিও বিবৃতি প্রচার করা হয়, সেটিও তাদের কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয় বলে জানান।

২ আগস্ট, টানা বৃষ্টির মধ্যেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামে। সারা দেশে এবং রাজধানীতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। নিহতদের জন্য বিচার, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি এবং কারফিউ প্রত্যাহারের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা।

দিনভর সংঘর্ষে অন্তত দুজন নিহত হন—একজন হবিগঞ্জে দিনমজুর ও আরেকজন খুলনায় পুলিশের দাবি মতে কনস্টেবল। আহত হন ১৫০ জনের বেশি। ঢাকার উত্তরা, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর-১০, শাহবাগ ও আফতাবনগরে রাস্তা অবরোধ করা হয়। টাঙ্গাইল শহর বাইপাসে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।

একই দিন বিকেল ৩টায় ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে “দ্রোহ যাত্রা” নামে এক বিশাল মিছিল বের হয়, যার নেতৃত্ব দেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে “হত্যার বিচার চাই”, “হাসিনা পদত্যাগ কর”, “গুলিতে মরব, তবু মাথা নত করব না”—এমন নানা স্লোগানের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। মিছিল শুরুর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বক্তব্য দেন।

সেইদিনই বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন যেমন নগর পরিকল্পনাবিদ, লেখক, কবি, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীরা ঢাকায় পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ শিক্ষক এক বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানান।

আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “গত জুলাইয়ের বিক্ষোভে কমপক্ষে ৩২ শিশু নিহত হয়েছে, আরও অনেকেই আহত ও আটক হয়েছে। এটি ভয়াবহ ক্ষতি। ইউনিসেফ সবধরনের সহিংসতার নিন্দা জানায়।”

জুলাই ১৬ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত দেশজুড়ে সহিংসতা চলার পর সরকার ১০ হাজারের বেশি আন্দোলনকারী ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে আটক করে। ‘কম্বিং অপারেশন’ নামে পরিচিত এই বিশেষ ধরপাকড় চলে ২ আগস্ট পর্যন্ত।

একই দিন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার দাবি পূরণ করা হলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল সরকার ও শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে।

Link copied!