আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১২ দিন কারাগারে ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিম

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ১, ২০২৪, ১১:০৮ এএম

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১২ দিন কারাগারে ১৬ বছরের শিক্ষার্থী মাহিম

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। গ্রেপ্তারের পর ১২ দিন ধরে তাকে রংপুর জেলা কারাগারে বন্দী হয়েছে। মামলায় ওই কিশোরের বয়স ১৯ বছর বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, এই কিশোর রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ (প্রশাসন) সেলিম আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ছেলেটি তাদের প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। গতকাল বুধবার জানা গেছে, রংপুর জেলা কারাগারে বন্দী আছে সে।

এই শিক্ষার্থীর বাবা রংপুরের পার্কের মোড়ে স্টুডিও ব্যবসা করেন। তিনি গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমকে বলেন, “আবু সাঈদ নিহত হন ১৬ জুলাই। আর আমার ছেলে বাড়ি থেকে বের হয় ১৮ জুলাই দুপুরে। এরপর সে মডার্ন মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে। আমার ছেলের বন্ধুরা জানায়, আমার ছেলের পায়ে গুলি করেছে পুলিশ। এ কারণে সে পালাতে পারেনি। ওই দিন রাতে আমাকে ফোন করে বলা হয়েছিল, আমার ছেলে পুলিশ হেফাজতে আছে। পরদিন ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ছেলেটিকে ছেড়ে না দিয়ে জেলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।”

রংপুরের আদালত সূত্র জানায়, ওই কিশোরকে ১৯ জুলাই আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের তাজহাট আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

আবু সাঈদ নিহতের ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। গত শনিবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছিল।”

আবু সাঈদ যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট বোঝা যায়। তবে উঠতি বয়সের এই শিক্ষার্থীকে কীভাবে এই হত্যা মামলার আসামি করা হলো? তার বয়স কীভাবে ১৯ উল্লেখ করা হলো? পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে এর কোনও জবাব পাওয়া যায়নি।

তবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, “গ্রেপ্তারের সময় বয়স যাচাইয়ের সুযোগ হয়নি। পরে জেনেছি, ছেলেটির বয়স প্রায় ১৭ বছর হবে।”

ছেলেটির বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, “আমার ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু পুলিশ তাকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। শুনেছি, আমার ছেলে মাহিম অসুস্থ। কারাগারে নেওয়ার পর তিনদিন পরিবারসহ সেখানে গেছি। কিন্তু আমাদের দেখতে দেওয়া হয়নি।”

যোগাযোগ করা হলে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি গতকাল বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।

কিশোরের আইনজীবী আবদুল মোকছেদ বাহালুল গণমাধ্যমকে বলেন, “জন্মসনদসহ যাবতীয় প্রমাণপত্র দিয়ে রংপুর শিশু আদালত-১-এ গত ৩০ জুলাই জামিনের আবেদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির কথা রয়েছে ৪ আগস্ট।”

Link copied!