‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্টের রায়

জাতীয় ডেস্ক

এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠনে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে হাইকোর্টের রায়

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনে দ্বীপ উন্নয়ন আইন দ্রুত প্রনয়নের জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

রায়ে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ অতি দ্রুত আইন আকারে পাসের জন্যও জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছে উচ্চ আদালত। এতে বলা হয়েছে, জাপান ও ফিনল্যান্ডের প্রণীত আইন যতটুকু সম্ভব অনুসরন ও সমন্বয় করে আমাদের দেশের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি ‘দ্বীপ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য দ্বীপ উন্নয়ন আইন দ্রুত প্রণয়নে জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দেওয়া হলো।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেয়। ২০২২ সালের ২ জুন এই রায় দেওয়া হয়। দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আজ ১৫ পৃষ্ঠা সংবলিত এই রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এই রায় ও আদেশের অনুলিপি সব মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরকে ই-মেইলে পাঠানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রায় ও আদেশের অনুলিপি সব পক্ষকে দ্রুত অবহিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নওগাঁর মিজানুর রহমানকে পুকুর খনন বন্ধ করতে ভূমি অফিসের নোটিশ চ্যালেঞ্জ করে আনা এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেয় উচ্চ আদালত। নোটিশটিকে আইনগত কতৃত্ব বহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া এই রায়ে বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২ (১) মোতাবেক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও যেকোনো ভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার। শুধু সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন দ্বারা নাগরিকের উপরোল্লিখিত সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বিধিনিষেধ আরোপ করা তথা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪২(১) এর মর্মার্থ। সুতরাং দ্ব্যর্থহীনভাবে এটি বলা যায় যে, দেশের সব নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তন সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার। কোনোভাবেই ওই মৌলিক অধিকার তথা সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও যেকোনোভাবে এর বিলি-ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনে বাধা দেওয়া যাবে না। নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও যেকোনোভাবে এর বিলি- ব্যবস্থা তথা শ্রেণি পরিবর্তনের অধিকারে পরিবর্তন, বিধি-নিষেধ ও যেকোনো প্রকারের নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে করতে হবে।’

রায়ে বলা হয়েছে, বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর উপরিল্লিখিত ধারা ৪ পর্যালোচনায় এটি কাঁচের মতো পরিষ্কার যে, বিপণন তথা বিক্রয়ের উদ্দেশে কোনো উন্মুক্ত স্থান থেকে মাটি বা বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। কিন্তু স্বীকৃত মতেই আলোচ্য মোকদ্দমায় দরখাস্তকারী বিপণন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে কোন মাটি উত্তোলন করছেন না। রায়ে আরও বলা হয়, ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিধিনিষেধ আরোপ করে ও কৃষি জমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০১৬ খসড়া আইন প্রণয়ন করা হলেও কোনো এক অজানা কারণে এটি এখনও আলোর মুখ দেখছে না।

দীপ সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সম্মত টেকসই উন্নয়নের নিমিত্তে বিশ্বে প্রথম জাপান রিমোট আইল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট নামে একটি আইন ১৯৫৩ সালে প্রণয়ন করে। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও দ্বীপ উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে ২০১৭ সালে আইল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি নামে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেন দ্বীপগুলোর উন্নয়নের ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আমাদের দ্বীপগুলোর উন্নয়নের নিমিত্তে ‘দ্বীপ উন্নয়ন আইন’ দ্রুত প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

Link copied!