নভেম্বর ১, ২০২৩, ১১:৩১ এএম
আমরা যারা খুব ভোজনরসিক তাদের প্রতিবেলায় পাতে একটু আধটু আমিষ না থাকলে একেবারে যেন চলেই না। আমিষে আমাদের এমনই অভ্যাস যে নিরামিষ আমরা প্রায়ই এড়িয়ে চলি। অথচ এই নিরামিষ যে শরীরকে কতোটা ফিট রাখতে পারে, সেটা আমাদের ধারণার বাহিরে।
প্রাচীন ভারত এবং গ্রীক সভ্যতা থেকে নিরামিষ ভোজন শুরু হয়। নিরামিষ একপ্রকার সুষম খাদ্য। এর মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ তন্তু, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেসিয়াম, সম্পৃক্ত স্নেহপদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ রাসায়নিক পদার্থ। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে এই নিরামিষ নিয়ে প্রচলিত হয়েছে দিবস।
উত্তর আমেরিকার নিরামিষভোজী সংগঠন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির উদ্যোগে মানুষকে শাকসবজি তথা নিরামিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে ১৯৭৭ সালের ১ নভেম্বর থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ভেজিটেরিয়ান বা নিরামিষভোজীরা মূলত স্বাস্থ্যগত কারণেই এ খাবার গ্রহণ করে থাকেন।
বাংলাদেশে দিবসটি তেমন গুরুত্বের সাথে পালন করা হয় না। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও সংশ্নিষ্টদের ধারণা, দেশে নিরামিষভোজীর সংখ্যা কম নয়।আমিষ খাদ্যে পশুর মাংস খাওয়া হয়, অন্যদিকে নিরামিষ খাদ্যে সবুজ শাকসবজি, ডাল, শস্য, শুকনো ফল এবং তাজা ফলমূলও থাকে।
নিরামিষে মানুষের আগ্রহ কেন বাড়ছে- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পুষ্টিবিদ ও ডায়াটেশিয়ানদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিরামিষ জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আমিষভোজীদের তুলনায় নিরামিষভোজীদের আয়ুস্কাল বেশি হয়। একই সাথে নিরামিষভোজীদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ ও ওবেসিটিজনিত শারীরিক সমস্যাও কম হয়।
নিরামিষ খাবারের রয়েছে অনেক উপকারিতা।আপনিও জেনে নিন এই খাবারের উপকারিতা।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: নিরামিষ খাবারে সাধারণত ক্যালোরি কম থাকে তবে প্রচুর ফাইবার থাকে। এই কারণে, আমিষ খাবারের তুলনায় নিরামিষ খাবারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং বারবার ক্ষুধা লাগে না। ফলে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
২. হজম ভালো হয়: ফল, শাকসবজি, ডাল এবং গোটা শস্য সমন্বিত একটি নিরামিষ খাদ্য শরীরকে ভালো পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে। এর ফলে হজমশক্তি ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হয় না। আমিষ খাবার হজম করা তুলনায় অনেক ঝামেলার। এতে পেটের উপরেও চাপ পড়ে। তাতে ক্লান্তিও বেশি হয়। কারণ শরীরের সমস্ত এনার্জি খাবার হজম করার কাজে ব্যয় হয়।
৩. সংক্রমণের ঝুঁকি কম: আমিষ খাবারে এমন অনেক বস্তু থাকে থাকে যা শরীরে ব্যাকটিরিয়া প্রবেশের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এই সব ব্যাকটিরিয়া শরীরের জন্য মোটেই উপকারী নয়। উল্টো দিকে নিরামিষ খাবারে ব্যাকটিরিয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যাই হোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি ভালোভাবে সবজি ধুয়ে খাবেন যাতে ন্যূনতম টক্সিন শরীরে প্রবেশ করে। তাহলেই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক খানি কমে যেতে পারে।
৪. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: নিরামিষ খাবার বা উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যে পাওয়া পুষ্টি এবং খনিজগুলি ডায়াবিটিস থেকে মুক্তি দিতে পারে। এতে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং গ্লুকোজের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে। তাই এই ধরনের খাবার খাওয়া ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।