ব্যাচেলরদের দুর্দিনের একমাত্র সঙ্গী হচ্ছে ডিম। সাদা রঙের ডিম, বাদামি রঙের ডিম, হালকা লালচে রঙের ডিম। বর্ণে, গন্ধে আর স্বাদেও কিন্তু এর তফাৎ রয়েছে। ডিম ভাঙলে প্রায়শই আমরা খেয়াল করি ডিমের কুসুম হলুদ থেকে শুরু করে কমলা, সাদা, হালকা হলুদ বর্ণের হয়ে থাকে। কেন হয় এমন কখনো জানতে ইচ্ছে হয়েছে কি?
আজ জেনে নেয়, ডিমের খোলস এবং ডিমের কুসুমের রঙ কেন আলাদা হয়ে থাকে।
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন ক্রিস্টিয়ানদের ধর্মীয় উৎসবে তাদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করার জন্য ডিমকে লাল রঙের করে উৎসর্গ করতো।
তবে ডিমের খোসার রঙ তাদের জেনেটিক্যালি স্তরের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ডিমের খোলস বাদামি রঙের প্রোটোপোরফাইরিন নামক রঙ্গক থেকে আসে, যা লাল রঙ্গক হিমোগ্লোবিনের ভাঙনের ফলে হয়। এই একই রঙ্গক যা রক্তকে লাল রঙে পরিণত করে থাকে।
তবে ডিমের খোসার বাদামি বা ফ্যাকাশে হওয়ার সঙ্গে বেশ কিছু কারণ দায়ী আছে । অনেক সময় মুরগির কিছু রোগ ডিম্বনালীকে আক্রমণ করে থাকে তখন এই সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস শেলের রঙ পরিবর্তন হতে বাধ্য করে।
ডিম পাড়ার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে পিগমেন্টের বেশিরভাগ অংশ খোসায় স্থানান্তরিত হয়। ডিম্বানু ডিম্বনালিতে বেশিক্ষণ রাখলে মুরগি মানসিক চাপের কারণে ক্যালসিয়ামের স্তর পাতলা হয়ে খোলস ধূসর সাদা হতে পারে। এছাড়া বয়স, পুষ্টির অভাব, কৃমি উপদ্রবের প্রভাবেও ডিমের খোলসের রঙ পরিবর্তন হয়ে সাদা এবং ফ্যাকাশে বাদামি রঙে পরিবর্তিত করে থাকে।
ডিমের কুসুম হালকা হলুদ থেকে কমলা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এটা মুরগির খাবারের উপর নির্ভর করে থাকে। গাঢ় কমলা যুক্ত ডিমের কুসুম চারণভূমিতে থাকা মুরগি থেকে আসে। সেখানে মুরগিগুলো তাজা ঘাস এবং পুষ্টিকর সব ধরনের খাবার খেয়ে থাকে।
এই খাদ্য ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ যার ফলে কুসুম গাড় কমলা রঙের হয়। কমলা কুসুম যুক্ত ডিম ভিটামিন ডি এবং ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। এটা সাধারণত মুরগির খাবারের কারণে হয়ে থাকে।
ভূট্টা, চাল এবং মটরশুটি অর্থাৎ দানা জাতীয় খাবার খাওয়ানো মুরগি সাধারণত হালকা কমলা থেকে হলুদ রঙের ডিমের কুসুম দিয়ে থাকে। এই ধরনের খাবারে জ্যান্থোফিল নামক রঙ্গক থাকে, যা গাছপালা এবং প্রাণীদের হলুদ রঙ দেওয়ার জন্য দায়ী। তবে যেসব মুরগিকে এর থেকে নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হয় সেসব মুরগির থেকে সাদাটে কুসুম রঙের ডিম পাওয়া যায়।
ডিমে কুসুমের রঙ এবং পুষ্টিগুণ খাবারের উপর নির্ভর করলেও ডিমে খোসার রঙ খাদ্যের উপর নির্ভর করে না। বরং মুরগির জাত এবং মুরগির রঙের উপর নির্ভর করে। সাদা পালক যুক্ত মুরগি সাদা খোসাযুক্ত ডিম পাড়ে এবং লাল পালক যুক্ত মুরগি বাদামি খোলস যুক্ত ডিম পাড়ে। তবে সব মুরগিকে সুষম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে যেকোনো খোলস যুক্ত ডিমেই কমলা রঙের কুসুম পাওয়া যাবে।
ডিমের পুষ্টিগুণ সাধারণত সব রঙের কুসুমেই বিদ্যমান। গাঢ় কমলা রঙের কুসুমেও যে পুষ্টি আপনি পাবেন হালকা হলুদ বা ফ্যাকাশে ডিমেও একই পুষ্টি বিদ্যমান।