দূর্গাপূজার সপ্তমীতে পূজা মণ্ডপে বিএনপি মহাসচিব

‘অন্যান্য ধর্মের অধিকার রক্ষা করার জন্যও আমরা চেষ্টা করি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ২২, ২০২৩, ০৮:৫০ এএম

‘অন্যান্য ধর্মের অধিকার রক্ষা করার জন্যও আমরা চেষ্টা করি’

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

দূর্গাপূজার সপ্তমীতে ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে দলের এই শুভেচ্ছা জানান।

ফখরুল বলেন, ‘‘সার্বজনীন শারদীয় দূর্গা উৎসবের শুভেচ্ছা। আমি আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি এখন গৃহবন্দি অবস্থায় অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছেন তার পক্ষ থেকে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং দলের পক্ষ থেকে আজকে এই দূর্গা উৎসবের যারা আজকে উপস্থিত আছে তাদের সকলকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।”

হাজার বছর ধরে এই উৎসব উদযাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘হাজার বছর ধরে এখানে আমাদের সনাতন মানুষেরা পালন করছেন। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হয় এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে ১৯৭১ সনে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম সবাই এক সাথে তারা যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন করেছে।”

‘‘স্বাধীনতার সময়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি… কোনো ধর্ম নয়, বর্ণ নয়, কোনো সম্প্রদায় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে নির্মাণ করা।আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করেছি, কাজ করে চলেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সংগ্রাম করেছেন, যুদ্ধ করেছেন, সংগ্রাম লড়াই করেছেন তিনি যে দর্শন দিয়েছিলেন সেই দর্শন বিএনপির দর্শন অর্থাৎ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী, সেই দর্শনের মধ্যেও একথা খুব পরিস্কারভাবে বলা আছে, যে এই দেশটি কোনো নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বীর জন্য নয়, নিদিষ্ট গোত্রের জন্য নয়, নির্দিষ্ট বর্ণের জন্য নয়। এটা এদেশে বসবাসকারী সকল মানুষের জন্য।”

ফখরুল বলেন, ‘‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সেই একেই কথা সব সময় বলেন যে, আমি সংখ্যালঘু কথায় বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি এদেশে ‍যারা আছেন সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, তাদের পরিচয় একটা তারা বাংলাদেশি। আজকে ধর্মীয় হতে পারে, অন্যান্য গোত্রের হতে পারে, অনেক আপনার সংখ্যায় কম হতে পারেন, কিন্তু অধিকার সকলের সমান।”

‘‘যে সংবিধানের কথা বলেছেন, সেই সংবিধানে পরিস্কার করে এই কথাগুলো বলা আছে অধিকার… আমরা সেটা বিশ্বাস করি না, আমরা সেটা পালন করি, আমরা সেটাকে চর্চা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে ৫২ বছর স্বাধীনতার পরেও আমাদেরকে এ কথা বলতে খুব কষ্ট হয় যে, আমরা ১৯৭১ সালে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আশা দেখেছিলাম বাংলাদেশে যেটা আজ ধুলায় মিশে গেছে। সেই গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছে, মানুষের অধিকারগুলো হরণ করা হচ্ছে এমনকি ন্যূনতম অধিকার মানুষের ভোটের অধিকার সেটার জন্য মানুষকে লড়াই করতে হচ্ছে।”

অসাম্প্রদায়িকতার বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘আমরা বিএনপি সবসময়ই শুধু অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি না… অন্যান্য ধর্মের যে অধিকার সেই অধিকার রক্ষা করার জন্য আমরা চেষ্টা করি। তার প্রমাণ এই মণ্ডপ, এই উপাসনালয়। আপনাদের নিশ্চয় মনে থাকার কথা সাদেক হোসেন খোকা সাহেব যখন এই ঢাকার মেয়র ছিলেন তিনি প্রথম এই জমি উদ্ধারের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এবং উদ্ধার করেছিলেন।”

‘‘রমনা কালিমন্দির ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল সেই কালি মন্দির আমাদেরই সরকার জমি উদ্ধার করে মন্দির নির্মাণ করেছিল। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে যতগুলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেই ঘটনাগুলোর সাথে সবসময় দেখা গেছে যারা জড়িত আছেন তারা শাসকগোষ্ঠীর সাথে জড়িত।”

‘ধর্মকে নিয়ে সংঘাত নয়’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব এই দেশে ধর্মকে নিয়ে কোনো রকমের বাড়াবাড়ি যে কেউ না করেন। ধর্মকে নিয়ে যেন কোনো সংঘাত না হয়, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি না হয়। আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্র যদি থাকে সেখানে সকলের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব, এই সংঘাত সৃষ্টি হয় না।”

‘‘এজন্য আজকে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। আমরা মনে করি, এখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে সকলের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, সকল মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।”

তিনি বলেন, ‘‘আজকে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে সেই সংকট কোনো দলের নয়, ব্যক্তির নয়। এই সংকট সমগ্র জাতির সংকট। আজকে দেশকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। এই বিভক্তির রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা ঐক্যের রাজনীতি চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মুক্তি হলে সেখানে মানুষের মুক্তি সম্ভব হবে।”

‘‘আসুন এই আনন্দময় দিনে আমরা এই প্রার্থনা করি, আমাদের দেশে যেন শান্তি আসে, মানুষ যেন তাদের অধিকার ফিরে পায়, আমাদের গণতন্ত্র ফিরে আসে, মানুষ মুক্তি লাভ করে, একটি শান্তিময় প্রেমময় দেশ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলতে পারি।”

ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিবেশীদের সাথে নিজের বড় হওয়া ও তাদের সংস্কৃতির সাথে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দূর্গা পূজা বলেন, ঈদের কথা বলেন অথবা রমজানের কথা বলেন, আমাদের যারা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করেন তাদের উৎসবের কথা বলেন…. আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার, রাষ্ট্র সবার।’’

‘‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান সাহেব তারাও এই বিশ্বাস করেন, উনারা যখনই সুযোগ পেয়েছেন এই বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তাদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করেছেন।”

বিএনপি মহাসচিব পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব। পরে রাতে তিনি বনানী মাঠে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করে পূণ্যার্থীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। 

Link copied!