আগে কবি ও শিল্পীদের হরহামেশাই প্রেমিকাকে বলতে শোনা যেত- তোমার জন্য চাঁদেও প্লট কিনে দিতে পারি। এখন মনে হয় আমাদের নতুন উপমা খোঁজার সময় এসেছে। কেননা বিজ্ঞানীরা এখন শুধু চাঁদে গিয়েই ক্ষান্ত নন, রীতিমতো রেলস্টেশন বানাতে চাইছেন তারা। কিঞ্চিৎ অদ্ভুত শোনালেও ঘটনা সত্য।
দীর্ঘ গবেষণার পর নতুন এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে মহাকাশ বিষয়ক মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসা। তারা বলছে, পৃথিবীবাসী যাতে ট্রেনে করে চাঁদে যেতে পারে সেজন্য নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে চাঁদের যাওয়ার প্রজেক্ট হিসেবে বিশেষ একটি মিশন চালু করেছে চীন। এদিকে আবারও মানুষ পাঠাতে চাইছে নাসা। এবার সেখানে বসতি স্থাপনের কথা ভাবছে তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষকে কীভাবে চাঁদ কিংবা অন্য কোনো গ্রহে নিয়ে যাওয়া যায়, তার জন্য সর্বোত্তম উপায়ও খুঁজে চলেছেন তারা। এক্ষেত্রে উড়ন্ত গাড়ি তথা সসারের মধ্যমে মানুষকে চাঁদে নিয়ে যাওয়া কিছুটা কঠিন হতে পারে। তাই চাঁদে যাওয়ার জন্য একটি রেল ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় নাসা। যাতে পৃথিবীবাসী চাঁদের মতো দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণে সক্ষম হয়।
আশা করা হচ্ছে, চাঁদে যখন পৃথিবীবাসীকে নিয়ে যাওয়া হবে তখন এই রেল ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চুম্বক চালিত এই রেলপথ তৈরিতে অর্থায়নও এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে।
পৃথিবীবাসী ট্রেনে করে চাঁদে নিয়ে যেতে নানা আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত নাসা। রেল ব্যবস্থা তার একটি সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। তবে পৃথিবীর মতো চাঁদে যাওয়া ট্রেনের কিন্তু দুটো ট্র্যাক থাকবে না। ধারণা করা হচ্ছে, ফ্লোট প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পৃথিবীবাসীকে চাঁদে নেওয়া হতে পারে। তবে কীভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি? চলুন জেনে আসি-
ফ্লোট প্রযুক্তি কী
ফ্লোট প্রযুক্তি অনেকটা সায়েন্স ফিকশন মুভির মতো। ফ্লোট মানে হল ট্র্যাকে নমনীয় লেভিটেশন। এই প্রকল্পটি নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি পরিচালনা করছে। নাসার উদ্ভাবনী উন্নত ধারণা প্রোগ্রাম অধ্যয়নের দ্বিতীয় পর্যায় এটি। এ পর্যায়ে প্লাজমা রকেট ও একটি বড় অপটিক্যাল অবজারভেটরি আছে।
নাসার নির্মিত রকেটটি পৃথিবী থেকে সৌরজগতের যেকোনো স্থানে দ্রুত ভ্রমণে সক্ষম হবে। চাঁদে ট্রেন চালানোর জন্য নির্ভরযোগ্য, স্বয়ংক্রিয় ও দক্ষ পেলোড পরিবহন ব্যবস্থা এটি। এই মাটির সাহায্যে নভোচারীরা চাঁদে ভিত্তি তৈরি করতে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
নাসার রোবোটিক্স ইঞ্জিনিয়ার ইথান স্ক্লার এই প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অনুমান যে দিনে এটা ১০০ টন পণ্য পরিবহণ করতে পারে। তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, ট্রেনের যে চাকা, তা ট্র্যাকের ওপর দিয়ে উড়ে উড়ে এগিয়ে যাবে। এসব রোবটে বসানো হবে কার্ট এবং প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১ দশমিক ৬১ কিলোমিটার বেগে চলবে।
মহাকাশ সংস্থা নাসা বলেছে, ফ্লোটের মূল উদ্দেশ্য হবে চাঁদের সেই জায়গাগুলোতে পরিবহন পরিষেবা দেওয়া, যেখানে নভোচারীরা সক্রিয় আছেন। চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদের মাটি ও অন্যান্য উপকরণ বহনের কাজ করবে এটি। পাশাপাশি যে এলাকায় এই মহাকাশযান অবতরণ করবে, সেখান থেকে বৃহত্তর লোড সামগ্রী ও সরঞ্জাম পরিবহন করবে এটি।
ফ্লোট প্রযুক্তি হবে নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ। ১৯৭২ সালের পর যা প্রথমবারের মতো চাঁদে মহাকাশচারীদের পাঠাতে প্রস্তাব করা হয়েছিল। চাঁদের বুকে বসতি স্থাপনে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে নাসা।