গাঁজা সেবনে নিষেধ করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় গাঁজা সেবনকারী ছাত্রলীগ কর্মীও আহত হন।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে থাকা একটি দোকান থেকে টাকা লুটেরও অভিযোগ উঠেছে।
“মারমারির সময় আমার দোকান ভাঙচুর করে ক্যাশবক্সে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা লুট করেছে তারা। আমার স্ত্রীকেও মারধর করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই”
- রফিকুল ইসলাম, দোকানদার
আহত ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন মেহেদী হাসান পুলক ও আবু অম্বর ফয়েজি অপু। পুলক বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এবং অপু চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে আহত ছাত্রলীগ কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ শেখ বন্ধন।
ঘটনায় জড়িত অন্যান্য ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, সিফাত সালাম, শামসুল আরিফিন খান সানি, আজিজুল হক আকাশ, তাসিন তানভীর, মৃদুলসহ অন্যরা। তাদের সঙ্গে মারধরে অংশ নেন অন্তত ৪০ নেতাকর্মী। জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পেছনে গাঁজা সেবন করছিল বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এ সময় সেখানে গাঁজা সেবনে নিষেধ করেন চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন তাদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে চারুকলার শিক্ষার্থীরা আহত অপু ও পুলককে জানান। তারা সেখানে এলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে বন্ধনের মাথা ফেটে যায়। এ ঘটনায় বন্ধন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জানালে ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও তাকে রড-লাঠিসোটা দিয়ে মারধর শুরু করে। পুলক পাশের একটি দোকানে আশ্রয় নেয়। পরে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা দোকানদার রফিককে ধাক্কা দিয়ে দোকানের ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ছয় হাজার টাকা ছিনতাই করে বলে অভিযোগ করেন ওই দোকানদার। পরে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আহত মেহেদি হাসান পুলক বলেন, “এক ছোট ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বলে, অপু ভাইয়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসের ছোট ভাইরা খারাপ ব্যাবহার করছে ভাই একটু আসেন। আমি যাওয়ার পর ওরা আমার দিকে তেড়ে এসে আমাকে ধাক্কা মারে। এরপর ওরা সবাই মিলে আমাকে মারা শুরু করে।”
আহত আবু অম্বর ফয়েজি অপু বলেন, “আমার কয়েকটা ছোটভাই বন্ধনকে গাঁজা সেবন করতে নিষেধ করায় তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমি সেখানে গিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এ সময় বন্ধন ও তার বন্ধুরা আমার ওপর চড়াও হয়। পরে সে আমাকে আটকে রেখে তার বন্ধুদের ফোন দেয়। তারা এসে অতর্কিতভাবে আমাদেরকে মারধর শুরু করেন।”
গাঁজা সেবনকারী ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ শেখ বন্ধন নিজের ওপর আরোপ করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “গাঁজা নয়, আমরা সিগারেট খাচ্ছিলাম।”
ছাত্রলীগের ওই কর্মী বলেন, “আমি ও আমার বন্ধুরা চারুকলায় ঘুরতে গেছিলাম। ওখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে একজন শিক্ষার্থী এসে জিজ্ঞেসা করে তোরা কারা? আমরা আমাদের পরিচয় দেই। পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা বলে তোরা এখানে কী করতে আসছিস? এরপরে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। তারপর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই আসে। তারা আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। তারা বলে আমাদের বাসা কাজলায়, চারুকলায় তোরা আমাদের চিনিস না? এভাবে কথা বলতে বলতে তারা আমার জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে, সামনে থেকে মুখে চড়-থাপ্পর, ঘুসি মারে। পেছন থেকে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমার বন্ধুদের ফোন দিই তারা এসে আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে।”
মারধরে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মী রাহাত খান সময় বলেন, “আমি পুলক ভাইয়ের হাতে থাকা লাঠি কেড়ে নিয়েছিলাম যাতে সে আমাদেরকে আঘাত করতে না পারে। তবে সেই লাঠি দিয়ে আমি কাউকে মারধর করিনি।”
দোকান ভাঙচুর ও ছিনতাইয়ের বিষয়ে ভুক্তভোগী দোকানদার রফিকুল ইসলাম বলেন, “মারমারির সময় আমার দোকান ভাঙচুর করে ক্যাশবক্সে থাকা প্রায় ৬ হাজার টাকা লুট করেছে তারা। আমার স্ত্রীকেও মারধর করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, “চারুকলায় ছোট একটা সমস্যা হয়েছিল। পরে আমি, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বসে এই সমস্যার সমাধান করেছি। তবে মারধরে কেউ জড়িত থাকলে আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।”
সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘গাঁজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলাটা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনা চারুকলা অনুষদের বাউন্ডারির ভেতর ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা ডিন মহোদয় বরাবর একটা আবেদন করবে। এরপর ডিন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবে। তারপর আমরা প্রশাসন দেখবো।’