কুকুরে কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, ধর্ষিত হলে যাবে কেন— প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ১১, ২০২২, ০৬:২৪ এএম

কুকুরে কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, ধর্ষিত হলে যাবে কেন— প্রশ্ন শিক্ষামন্ত্রীর

নারীদের অধিকার ইস্যুতে আবারও কড়া মন্তব্য করলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, কুকুরে কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, তাহলে ধর্ষিত হলে সম্ভ্রম চলে যাবে কেন?

সোমবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘নারীর অবস্থা, অবস্থান, পড়াশোনা, তাঁর অধিকার, পোশাকের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ধর্ষণ নিয়েও কথা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজ মনে করবে— ধর্ষণ হলে সম্ভ্রমহানি ঘটে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষণ চলতে থাকবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসেবে কেউ না কেউ ব্যবহার করবে। যুদ্ধে ব্যবহার করবে, স্বাভাবিক জায়গায় ব্যবহার করবে, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ব্যবহার করবে, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘কুকুর কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, কিন্তু ধর্ষিত হলে সম্ভ্রম যায়। নিশ্চয় সম্ভ্রম নারীর কোনও বিশেষ অঙ্গে থাকে না। অতএব, ধর্ষণের সঙ্গে সম্ভ্রমের কোনও সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, আমি কখনও মনে করি না তাঁদের সম্ভ্রমহানি হয়েছিল। তাঁদের একদল পশু নির্যাতন করেছিল। তাঁদের যদি কুকুরে কামড় দিতো, তাহলে নিশ্চয় আমরা বলতাম না সম্ভ্রমহানি হয়েছিল। তাঁদের পিতা ও সমাজ পরিত্যাগ করেছিল। একজন পিতা মুজিব তাঁদের মেয়ের মতো করে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। সমাজে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছিলেন। তাঁকে যখন হত্যা করা হয়েছে— আবার সেই নারীদের পুরো সমাজ ও রাষ্ট্র তাঁদের ফেলে দিয়েছিল। এখনও প্রতিদিন যেসব ঘটনা ঘটছে, প্রতিদিন ঘটতে থাকবে, যতক্ষণ আমরা মনে করবো—ধর্ষিত হলে তার সম্ভ্রম চলে যায়। কোনও নারীর সারাটি জীবন ধ্বংস করার জন্য একটা কিছু করলাম। সমাজও তা-ই মনে করছে, মেয়েটিও তা-ই মনে করছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরুতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের শরীরে অসুস্থতা দেখা দিলে দৌঁড়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। কিন্তু মানসিক সমস্যা আছে, তোলপাড় চলছে। কিন্তু কেউ স্বীকারই করবেন না। যারা জানেন তাঁরাও স্বীকার করলেও রেমিডি চাইবার ব্যবস্থা করবে না। নারীরা, মাঝ বয়সী মানুষেরা, সমাজের বড় একটা অংশ মানসিক বৈকল্যে ভোগেন। কিন্তু এটাকে কেউ স্বীকার করতে রাজি নন। আমার বাচ্চা পড়তে পারছে না, ডিভাইসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাচ্চাটিকে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে, থেরাপিস্টের কাছে নিয়ে যাচ্ছি না কেন? তাহলে আমার মান-ইজ্জত থাকবে না। লোকে বলবে—মানসিক চিকিৎসকের কাছে গেছো কেন, থেরাপিস্টের কাছে গেছো কেন? আমার ছেলে, আমার মেয়ে কী পাগল, এরকম নানান কথা। আমরা মানসিক দোটানার মধ্যে থাকি, কিন্তু বাস্তবতাকে স্বীকার করতে চাই না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নতুন এই শিক্ষাক্রম যদি পুরোপুরি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, সেটার চেষ্টা আমাদের থাকবে। তাহলে আমি বিশ্বাস করি—আগামী পাঁচ বছর পর থেকে একটু পরিবর্তন দেখতে শুরু করবো। ১০ বছর পর বড় পরিবর্তন দেখতে পাবো। এই পরিবর্তন রাতারাতি হয় না, সময় লাগে।

Link copied!