বিভ্রান্তিকর ওয়াজ নিয়ে সংসদে তুমুল আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৫, ২০২১, ১১:১৭ পিএম

বিভ্রান্তিকর ওয়াজ নিয়ে সংসদে তুমুল আলোচনা

ওয়াজ-মাহফিল ও ধর্মীয় আলোচনার নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলামি বক্তাদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য বা ওয়াজ নিয়ে জাতীয় সংসদে তুমুল আলোচনা করেছেন সরকারি ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা।

সরকারকে আক্রমণ করে বিএনপির সংসদ সদস্যরা বলেন, ধর্মীয় নেতাদের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে নির্যাতন করছে সরকার। কিন্তু বিএনপির এই দাবি অস্বীকার করে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, শুধুমাত্র বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন।

মঙ্গলবার হজ্জ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিল নিয়ে সংসদের আলোচনায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, একজন প্রসিদ্ধ আলেম (আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান) গত কয়েকদিন ধরে নিখোঁজ। তার পরিবার কোন খোঁজ পাচ্ছে না। পরিবারের দাবি, পুলিশ তাকে খুঁজে দেওয়ার কোন চেষ্টাই করছে না। আমি বলতে চাই, আইন সকলের জন্য সমান। আলেমরা নির্যাতনের শিকার হলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ৫৬ শীর্ষ আলেমের সম্পদের হিসেব তলব করেছে। আমি মনে করি, দুদকের উচিত সবার আগে ৩৫০ সংসদ সদস্যের সম্পদের তথ্য চাওয়া। যে কোন ইমাম মানেই আলেম নয়।

এদিকে চিত্রনায়িকা পরীমণিকে নিয়ে চলমান ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিমণিকে ‘ভাগ্যবতী’হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত বৃহস্পতিবার থেকে একজন ধর্মীয় বক্তা নিখোঁজ রয়েছেন এবং তার সঙ্গে আরও তিন ব্যক্তি নিখোঁজ। এখন পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে কোন খোঁজ পাওয়া যায় নাই। একই সময় একই ধরনের অভিযোগ আমরা চিত্রনায়িকা পরীমণিকে করতে দেখছি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরীমণি ভাগ্যবতী, কারণ তার মামলা নেওয়া হয়েছে অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য হয়নি ত্ব-হার পরিবারের, সেই সৌভাগ্য হয়নি বাংলাদেশের ৬০৪টি পরিবারের যারা দীর্ঘদিন নিখোঁজ। তাদের ব্যাপারে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু বলতে পারছে, না লোকাল পুলিশ স্টেশন কিছু বলতে পারছে। না সে ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে তদন্ত করে তারা কোথায় হারিয়ে গেছে তা খুঁজে বের করা।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, 'বারবার বলা হয় বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করা হচ্ছে। এটা করা হচ্ছে এই অর্থে যে, যখন কোন ব্যক্তিকে গুম করা হয়, পাওয়া যায় না। তখন তার পরিবার বলে আমার ছেলে কোন রাজনীতির সাথে যুক্ত না। তার মানে সরকারি দল না করলে সরকারি দলের মতের সাথে না মিললে যে হাওয়া হয়ে যেতে পারে, নাই হয়ে যেতে পারে এটাই বিরাজনীতিকরণ।'

এদিকে এমপি হারুনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ওয়াজ-মাহফিলের নামে কিছু ইসলামিক বক্তা ঘৃণা ছড়াচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘করোনা যখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশে, তখন কিছু ইসলামিক বক্তা বললেন, মুসলমানদের করোনা হবে না। কিন্তু আমি বলছি, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, আমাদের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এবং হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাহলে তারা (ওই বক্তারা) কীভাবে আলেম হন। এটা কী ইসলামের শিক্ষা?’

তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি এ ধরনের আলেমদের থেকে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। তারা কেমন আলেম, সেটিও যাচাই করে দেখা উচিত। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম। এখানে সীমিত পরসরে বিয়ে, ভালোবাসা বলে কিছু নেই।

কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এই আলেমদের কারো আরো বক্তব্য শুনে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা বিতর্কিত বিষয় প্রকাশ করে।

ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ইসলামের আলেমগণের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। বরং যারা রাষ্ট্র ও সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করেছে এবং অর্থ আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, যদি ভুল করে কাউকে আটক করা হয় তাহলে দ্রুততম সময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক ইসলামিক নেতা মুক্তি পেয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে তারা আটক রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের আলেমদের অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখেন। আর হেফাজতের এই ঘটনার পরও বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য তিনি কাজ করেছেন।

Link copied!