‘মন চাইলেও ভালো মন্দ খাইতে পারি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

অক্টোবর ২১, ২০২২, ০৫:৪৪ পিএম

‘মন চাইলেও ভালো মন্দ খাইতে পারি না’

মগবাজারের বাসিন্দা রাজিয়া সুলতানা। কিছুটা কম মূল্যে সাপ্তাহিক বাজার করবেন বলে একটি চটের ব্যাগ  হাতে করে নিয়ে এসেছেন কারওয়ান বাজারে। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বাবুরে কি আর কমু দুঃখের কথা, সব জিনিসের দাম বাড়তি। ভালোমন্দ এখন আর খাইতে পারি না। মাঝে মইধ্যে আধা কাঁচা সবজিও কিনি দাম কম বইলা। আগে যে টাহায় ১ সপ্তাহের খাবার জিনিস কিনতে পারতাম এখন আর সেইডা পারি না। অহন কম কিনি, কম খাই।

কিছুটা কাছাকাছি কথা বলেন ভ্যান চালক রমিজ উদ্দিন। আজ শুক্রবার বলে তিনিও বাজার করতে এসেছেন। বলেন, কি খামু, কি কমু। মাংসের চেহারা তো মাসেও একবার দেহি না। কোন রকম বাঁইচা থাহা আমাগো। সব জিনিসের দাম বাড়তাছে, কমে আর না। বাড়ে মেলা টাহা, কমার সময় কমে দুই পাঁচ টাহা।



বাজারে এসেছে শীতের সবজি। ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, শালগম, মূলা ইত্যাদি। তবে সবজির দাম কিছুটা নাগালের ভেতরে থাকলেও গত কয়েকসপ্তাহ ধরেই বাজারে মুরগির দাম চড়া। মাঝে মধ্যে ১০ থেকে ১৫ টাকা ওঠানামা করছে। আর গরুর মাংসের দাম অস্থিতিশীল। তাই এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই রয়েছে গরুর মাংস ও মুরগির দাম। এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে চালের দাম। কিন্তু চিনির দাম আগের মতই বাড়তি।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান ও হাতিরঝিল বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহে ১৯০ টাকা বিক্রি হতো যা ১০ টাকা কমে এ সপ্তাহে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বেড়েছে সোনালী ও লেয়ার মুরগির দাম। সোনালি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক ৩৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে লেয়ার ২৮০ টাকা, সোনালী ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হতো।



এছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, কাটা মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। গরু ও খাসির মাংসের দাম গত কয়েকমাসের মতোই স্থিতিশীল রয়েছে। হাসের জোড়া ১০০০টাকা।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, কলিজাও মাংসের দামে বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে। গরুর ভ্যাপসা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দর কষাকষি করলে ১০ থেকে ২০ টাকা কমান ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, সব জিনিসের দাম বেশি। মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ সমস্যায় বাচ্চা ফুটানো সমস্যা হচ্ছে তাই খামার থেকেই উৎপাদন কমে গেছে। আর বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিরা মুরগির দাম বাড়িয়েছেন।

সায়মা আক্তার নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রী বলেন, গরুর মাংসের কাছেই যাওয়া যায়না। ব্রয়লার মুরগির দামও অনেক। ১২০ টাকার ব্রয়লার ২ থেকে ৩ মাস ধরে প্রায় ২০০ টাকায় কিনতেছি। আর মাছের বাজারেও আগুন। এদিকে কোন সবজিই ৮০টাকার নিচে নাই। কি খাবো সেটাই বুঝিনা।



কথা হয় সবজি বিক্রেতা আব্দুস সামাদের সাথে। তিনি জানান, ভেন্ডি ৬০টাকা কেজি, পটল ৫০টাকা কেজি,  ইন্ডিয়ান টমেটো ১৪০টাকা কেজি, ফুলকপি সাইজ অনুযায়ী ৪০থেকে ৫০টাকা কেজি, করলো ৬০টাকা, শসা ৬০টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০টাকা কেজি।

স্কুল শিক্ষক রেজোয়ান কবির বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মাসে এক দুইবার কিনি গরুর মাংস। কয়েক মাস ধরে জিনিসপত্রের দাম কমেছেও না বাড়ছেও না। চাকরি করে যে বেতন পাই তা দিয়ে আর জীবন চলে না। সবকিছুর দাম বেড়েছে, বাড়েনি মানুষের আয়। বেঁচে থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে।

Link copied!