মঈন খানের বাসায় বিদেশি কূটনীতিকরা: নৈশভোজ নাকি রাজনৈতিক আলাপ?

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৪, ২০২৩, ০৫:৫১ এএম

মঈন খানের বাসায় বিদেশি কূটনীতিকরা: নৈশভোজ নাকি রাজনৈতিক আলাপ?

রাজধানীর গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের বাসায় যোগ দিয়েছেন ঢাকায় অবস্থিত কানাডা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও দূতাবাস প্রধান।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টাযর দিকে কূটনীতিকরা তার বাসায় যান বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মঈন খানের বাসায় যাওয়া কূটনীতিকদের মধ্যে ছিলেন- ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্রোসটার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিকটার ভেন্ডসেন প্রমুখ।

এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডেপুটি রাষ্ট্রদূত, কানাডিয়ান হাইকমিশনের পলিটিক্যাল চিফ, চীন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব অপারেশন, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি ও মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধি।

বিএনপির একটি সূত্র দাবি করেছে, বিদেশি কূটনীতিকরা মূলত মঈন খানের অমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশ নিতে তার বাসায় গেছেন।

মঈন খানের একান্ত সচিব মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন ভূঁইয়া মিল্টন গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসনের বিদায় উপলক্ষে তার সম্মানে ড. মঈন খান স্যার এবং ঈদুল ফিতর পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও নৈশভোজের আয়োজন করেন। সেখানে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। প্রতি ঈদেই এই ধরনের আয়োজন করেন ড. আবদুল মঈন খান।’

তবে কূটনীতিক পাড়ায় এই বিষয়টি নিয়ে বেশ জল্পনা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাবেক এক হাইকমিশনার বলেন, “নৈশভোজ প্রধান বিষয় নয়। আসল বিষয় হলো এই নৈশভোজের অন্তরালে দেশের রাজনৈতিক  পরিস্থিতি বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ও বিএনপির মনোভাব  বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করতে বিদেশি কূটনীতিকদের আহবান জানানোও বিএনপির একটি পলিসি হতে পারে।“

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সরকার ও প্রধান বিরোধী দল নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির দাবি, তারা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে নিরপেক্ষ বা কেয়ারটেকার সরকারে ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সংবিধান অনুযায়ি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপির দাবি এই সরকারের অধীনে কোনোভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে তারা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০২ টি আসন ও বিএনপি মাত্র ৭ টি আসন পায়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে বিএনপির মতো এতবড় একটি দল এক কম সংখ্যক আসন পেতে পারে না। এমনটাই দাবি করে আসছে বিএনপি।

আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ হয় তার ব্যবস্থা নিতে সরকারেরর ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই বিএনপি চলতি বছরের শুরু থেকেই বিদেশি কূটনীতিকদের সাথে আলোচনা চালাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সবশেষ আয়োজন হিসেবে বিএনপি নেতা মঈন খানের বাসায় নৈশভোজের নামে আলোচনা করা। বিএনপির একটি  উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে এমনটাই জানা  গেছে।

Link copied!