ইতিহাসের সাক্ষী হতে ভোর বেলায় মানুষ ছুটছে মেট্রো স্টেশনে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ২৯, ২০২২, ০৩:১৩ পিএম

ইতিহাসের সাক্ষী হতে ভোর বেলায় মানুষ ছুটছে মেট্রো স্টেশনে

সাধারণ যাত্রীদের বহন করা শুরু করলো মেট্রোরেল। বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলে ভ্রমণের জন্য বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকে অনেকে জড়ো হয়েছেন আগারগাঁও মেট্রো রেল স্টেশনে। যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেল স্টেশনের গেট সকাল ৮টায় খোলার কথা থাকলেও কিছুটা দেরি হয়।

প্রথমবারের মতো সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে সাধারণ যাত্রীবাহী মেট্রোরেল। এর আগে ভোর থেকেই উত্তরা নর্থ স্টেশন ও আগারগাঁও স্টেশনে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। আগারগাঁও স্টেশনেও দেখা যায় যাত্রীদের দীর্ঘ সারি। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ভোর থেকেই অনেকে ছুটে আসেন স্টেশনে।

সকালে আগারগাঁও মেট্রো স্টেশনে দেখা যায়, ভোর থেকেই লাইনে যাত্রীরা, এমনকি অনেকেই রাত থেকেও অপেক্ষা করেছেন সেখানে। শুধু মেট্রোরেলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্যই এসেছেন অনেকে।

মেট্রোরেলে চড়তে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি বলেন, 'আমার জীবনের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। আজকে মেট্রোরেলে আমি যাত্রী। আমি খুবই আনন্দিত। এই মূহূর্তটা আমার জন্য চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।'

মেট্রোরেলে চড়তে বসিলা ঘাটারচর থেকে আগারগাঁওয়ে আসা মো. সাব্বির আহমেদ জানান, ‘দেশে প্রথম মেট্রোরেল চালু হলো, সেটাতে চড়ার অভিজ্ঞতা নিতেই এখানে আসা। ভোরেই রওনা দিয়েছিলাম। আসতে আসতে দেখি অনেকেই আগে থেকেই এসে লাইনে অপেক্ষা করছেন।’

ছেলের আবদার মেটাতে সপরিবারে গুলশান থেকে মেট্রোরেলে চড়তে আসা মোহাম্মদ হাবিব বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা খুবই আনন্দের বিষয় আমাদের জন্য যে, আমরাও এখন আধুনিক রাষ্ট্রে রূপান্তর হচ্ছি। ছেলে সপ্তাহখানেক ধরে টিভিতে মেট্রোর প্রচার-প্রচারণা দেখে আগ্রহ করেছে চড়ার। সেই আবদার মেটাতেই সকাল ৭টা থেকেই অপেক্ষা করছি।’

গুলিস্তান থেকে রাতেই কাওরান বাজারে চলে এসেছেন হোটেল কর্মচারী সোলাইমান। এরপর সেখানে কোনোরকম রাত পার করে ভোরের দিকে চলে আসেন আগারগাঁওয়ে। তবুও কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, 'আমি পদ্মা সেতুতে ওঠার জন্য আগের দিন রাতেই পত্রিকা বিছিয়ে রাস্তায় ঘুমিয়ে ছিলাম। কর্নফুলি টানেলে যাইতে না পারলেও আশপাশে ঘুরছি। এখন মেট্রোরেলে চড়তে গতকাল রাতেই চলে আসছি, যেন দেরি না হয়।’ 

কীভাবে মেট্রোরেলে চড়তে হয় জিজ্ঞেস করলে সোলাইমান বলেন, 'সবাই যেভাবে চড়বে, আমিও সেভাবেই চড়ব।'

অধিকাংশ যাত্রীরাই মেট্রোরেলে কিভাবে চড়তে হবে তা জানেন না তবুও আশা করছেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই মেট্রোরেলে চড়তে পারবেন তারা।

প্রতিদিন ১০ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের মাঝে কোথাও না থেমেই ১০টি ট্রেন চলবে।

ট্রেনের ওঠার আগে স্টেশন থেকে একক যাত্রার কার্ড ও র‌্যাপিড পাস কার্ড নেওয়া যাবে। একক যাত্রার কার্ড মাত্র ৩০ সেকেন্ডে টিকিট কাউন্টার ও টিকিট বিক্রয় মেশিন থেকে নেওয়া যাবে। আর র‌্যাপিড পাস কার্ড নেওয়ার জন্য ফরম ওয়েবসাইট ও স্টেশনে পাওয়া যাবে।

মেট্রোরেলে কিছু নির্দেশনা চলতে হবে সেগুলো হলো- মেট্রোরেলে কোনো ধরনের পোষা প্রাণী বহন করা যাবে না। বিপজ্জনক বস্তু বহন করা যাবে না। মেট্রোর প্ল্যাটফর্মে পানের পিক বা থু থু ফেলা যাবে না। প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রো ট্রেনে খাওয়া দাওয়াও নিষেধ। প্ল্যাটফর্মের কোথাও কোনো ময়লা ফেলা যাবে না। কোচের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়ানো যাবে না। ওঠা-নামার সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। মোবাইল ফোনের স্পিকার অন করে রাখা যাবে না এছাড়া নিচু স্বরে কথা বলতে হবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) বহুল প্রতীক্ষিত ও দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টিকিট কেটে প্রথম যাত্রী হিসেবে মেট্রোরেলে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর বোন ও জাতির জনকের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। 

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাথে মেট্রোরেলে ২০০ জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। যাদের মধ্যে কূটনীতিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, নানা পেশার মানুষ, স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী লোকজন ছিলেন।

মেট্রোরেলকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার মুকুটে আরেকটি পালক বলে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অহংকারের আরেকটি পালক সংযোজন করতে পারলাম। এটাই বড় কথা।’

Link copied!