মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য সাবেক স্বামীর এনআইডির ফটোকপির দাবিতে অনশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

জানুয়ারি ১২, ২০২২, ০৮:৪৭ পিএম

মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য সাবেক স্বামীর এনআইডির ফটোকপির দাবিতে অনশন

মো. শাহ আলমের সঙ্গে মরিয়ম খাতুনের বিচ্ছেদের পর মেয়ে মিথিলা খাতুন থাকে মায়ের সঙ্গে। মিথিলা নতুন স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হবে। ভর্তির জন্য তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ফটোকপি প্রয়োজন। কিন্তু সেটি না পাওয়ায় মিথিলার ভর্তি আটকে গেছে বলে মরিয়মের অভিযোগ। তাই বাধ্য হয়ে মরিয়ম তার মেয়েকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনে বসেন।

গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে মরিয়ম-মিথিলার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কয়েকজন গিয়ে মা-মেয়েকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এদিন দুপুরে বিজয়নগর থানায় পৌঁছে শাহ আলমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন মরিয়ম।

মরিয়ম বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থেকে কয়েকজন এসে আমাদের বিজয়নগর থানায় যেতে বলেন। তাঁরা বিজয়নগর থানার পুলিশকে আমাদের বিষয়ে বলেও দেন। দুপুরে থানায় গিয়ে শাহ আলমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিই। অভিযোগ দেওয়ার পর শাহ আলমকে খুঁজতে যায় পুলিশ। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়াতেই অবস্থান করব।’

সোমবার মরিয়ম যখন তার মেয়ে মিথিলাকে সঙ্গে নিয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসেন, তার দুটি ব্যানারে দাবি লেখা ছিল। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে মিথিলার স্কুলে ভর্তির জন্য বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি হস্তান্তর, বাবার কর্মস্থলে শিক্ষা ভাতার ব্যবস্থা ও ভরণপোষণ।

পাবনার আটঘরিয়া গ্রামের শাহ আলম পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় কর্মরত।

মরিয়মের বাড়ি নাটোরে। তিনি জানান, ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট শাহ আলমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১১ বছর আগে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়।

মরিয়ম বলেন, বিচ্ছেদের পর আদালতের রায় অনুযায়ী, শাহ আলম তাঁকে মোহরানার ৯০ হাজার টাকা দিয়েছেন। মেয়ে মিথিলা তাঁর সঙ্গে থাকছে। মেয়ের জন্য মাসে এক হাজার টাকা দেন শাহ আলম। কিন্তু এই টাকায় মেয়ের পড়ালেখাসহ অন্য খরচ চালানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

মরিয়মের অভিযোগ, শাহ আলম আদালতে অসচ্ছলতার কাগজ দেখিয়ে মেয়েকে কম টাকা দিচ্ছেন। অন্যদিকে এখন মেয়েকে নাটোরের সিংড়ার সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে গিয়ে তিনি সমস্যায় পড়েছেন। কারণ, ভর্তির জন্য মেয়ের বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রয়োজন। কিন্তু মেয়ের বাবা শাহ আলমকে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি তা দিতে চাইছেন না। ফলে তিনি মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। এ কারণেই মেয়েকে নিয়ে তিনি আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে জানতে শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। সব পাওনা পরিশোধ করেছি। আমার বর্তমান সংসারে আরও দুই সন্তান আছে। ফলে আমাকে দুই জায়গায় খরচ দিতে হয়। মিথিলাকে আমার কাছে নিয়ে আসার জন্য মামলা করেছি।’

শাহ আলম বলেন, ‘মরিয়ম আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক একাধিক মামলা করেছে। তার করা মিথ্যা মামলার কারণে আমি ছয় বছর পর্যন্ত সাময়িক চাকরিচ্যুত ছিলাম।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাসান বলেন, নাটোরের মরিয়ম খাতুন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, মেয়েকে স্কুলে ভর্তির জন্য তার বাবার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি চাইলে, তিনি তা দেননি। ছুটিতে থাকায় শাহ আলমকে থানায় ডেকে আনা সম্ভব হয়নি।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের জুনে মরিয়মকে তালাক দেন শাহ আলম।

‘নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে ২০১৩ সালে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে জয়িতা পুরস্কার পান মরিয়ম।

সূত্র: প্রথম আলো

Link copied!