সহিদার রহমান প্রামাণিক (৬৫) নামে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির জানাজা ও দাফনে সন্তানদের বাধা দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মরদেহ দাফন নিয়ে দিনভর চলে নাটকীয়তা। অবশেষে মৃত্যুর ২৯ ঘণ্টা পর গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সহিদারের মরদেহ দাফন করা হয়।
জমিজমা নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে রংপুরের তারাগঞ্জে উপজেলার প্রামাণিকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে এখনও গ্রামজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মৃত সহিদার রহমান প্রামাণিক ছিলেন স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। জীবদ্দশায় তিনি তিনটি বিয়ে করেন। তার মধ্যে প্রথম দুই স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন তিনি। তিন সংসারে তার সাত সন্তান রয়েছে। তবে সহিদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রথম দুই স্ত্রীর তিন সন্তানের খোঁজ নিতেন না তিনি।
স্থানীয়রা জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে মারা যান সহিদার রহমান। মৃত্যুর পরদিন বুধবার সকালে পারিবারিক কবরস্থানে সহিদার রহমানের দাফনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কবরও খনন করা হয়। দুপুর ২টায় জানাজার জন্য নিকটবর্তী ওকড়াবাড়ি ফারুকিয়া আলিম মাদরাসা মাঠে তার মরদেহ নেওয়া হয়। সবাই যখন জড়ো হয়ে জানাজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন ছুটে এসে সহিদারের জানাজা ও দাফনে বাধা দেন প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা।
এ ঘটনায় জানাজায় অংশ নিতে আসা সবাই বিস্মিত হন। এরপর সমস্যার সমাধানে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু নানা অভিযোগ আর অজুহাতের কারণে তারা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি। রাত ৩টা পর্যন্ত মাদরাসা মাঠেই পড়ে ছিল সহিদারের মরদেহ। পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে তার মরদেহ দাফন করেন তৃতীয় স্ত্রীর সন্তানরা।
লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে সহিদারের প্রথম স্ত্রীর সন্তান ভুট্টু প্রামাণিক (৪০) বলেন, আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যের ভিটায় বসবাস করছি। আমার বাবার দুই একর আবাদি জমিসহ পাকা বাড়ি ও বসতভিটা রয়েছে ৩৫ শতক। কিন্তু আমাদেরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আমাদের দুই ভাইকে বাড়ি করার জন্য কমপক্ষে ১২ শতক জমি দেওয়ার দাবি আমরা জানিয়েছি। এই দাবি কেউ মানতে না চাওয়ায় জানাজা ও দাফনে বাধা দেওয়া হয়।
তবে সহিদারের তৃতীয় স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, স্বামীর সব সম্পত্তি আমি কিনে নিয়েছি। এ জমির ভাগ আমি কাউকে দেব না। মরদেহ দাফনের সঙ্গে জমির কোনো সম্পর্ক নেই। তারা সন্তান হিসেবে যে কাজটি করেছে, তা ভীষণ অন্যায় ও দুঃখজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, “দুপুর থেকে মৃত সহিদারের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বারবার সমঝোতা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। শেষ পর্যন্ত মীমাংসা না হওয়ায় বুধবার রাতে সহিদার রহমানের প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানরা চলে যান। এরপর রাত সাড়ে ৩টার দিকে কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে মরদেহ দাফন করেন তৃতীয় স্ত্রীর সন্তানরা।”