ফেরাউন সত্যিই তরমুজ বিক্রি করত?

সাদিয়া ইসলাম সুপ্তি

মার্চ ২৩, ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম

ফেরাউন সত্যিই তরমুজ বিক্রি করত?

ফেরাউন সত্যিই তরমুজের ব্যবসায়ী ছিলেন কিনা যাচাই বাছাই না করেই মনগড়া তথ্য দিয়ে ইতিহাস বদলে ফেলা হচ্ছে?

তরমুজের মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয়টি মাথায় রেখে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু বেশ কয়েকজন ইসলামিক স্কলার ও আলেমওলামা তাদের অভিমতে উল্লেখ করেছেন যে, ফেরাউনের মৃত্যু হয়েছে। তবে তার বংশধর রেখে গেছেন। ‘যারা এই ফেরাউনের দেখানো পথ অনুসরণ করে তরমুজ কেনে; অথচ বিক্রির বেলায় কেটে কেজি হিসেবে বিক্রি করছেন- এমন উদ্ভট তথ্য যারা সামনে আনছেন, তারা নিশ্চিতভাবে এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত করছেন যে ফেরাউনের প্রথম ব্যবসা ছিল তরমুজ বিক্রি। এখন প্রকৃত অর্থেই কি ফেরাউন তরমুজের ব্যবসা করতেন? আর খ্রিস্টের জন্মের আগে আদৌ কি তরমুজের উৎপাদন হতো?

শুরুতেই আসি ফেরাউন বলতে কাকে বোঝানো বুঝানো হচ্ছে। ইসলাম, খ্রিস্টান কিংবা ইহুদি ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী নবী মূসা আলাইহিস সাল্লামের সময়ে যে শাসন করেছে তাকে ফেরাউন বলা হচ্ছে। তবে ফেরাউন কোনো ব্যক্তির নাম নয় বরং এটা পদবী। প্রাচীন মিশর যারা শাসন করতো তারা ফারাও বা ফেরাউন ডাকা হতো। অনেকটা এই উপমহাদেশের রাজা বাদশাহর মতো।

ইতিহাসের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী তখন মূলত দুজন ফেরাউন শাসন করেছেন। দ্বিতীয় রামেসিস ও তার পুত্র মানেপ্টাহ। এই মানেপ্টাহই নীল নদে ডুবে মারা যায় বলে ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন। এদিকে এই ফেরাউন বা ফারাওরা মূলত কোন ব্যবসা করতো না বরং শাসন ও রাজ্য পরিচালনা করতো। আইন প্রণয়ন, যুদ্ধ পরিচালনা, কর আদায় ও মিশরের সব জমি তত্ত্বাবধানই তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু মিশরের ফারাওদের কোনো ব্যবসা বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার নজির মেলেনি।

তবে তৎকালীন মিশরে প্রচুর পরিমাণে শস্যের উৎপাদন ছিল, পাশেই নীলনদ থাকাই পানি পথে বাণিজ্যের জন্য যাতায়াতের সুব্যবস্থা, পাশাপাশি জাহাজ তৈরির কাজও হতো, মূল্যবান বস্তু হিসেবে সোনা ও ভিন্ন ধরনের পাথর ধাতুও ছিল। এদিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন তারা। শস্যের প্রাচুর্যতা থাকায় পণ্য আমদানির নজির খুব একটা দেখা যায়নি। কেননা মিশর অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। কোন পণ্য আমদানির প্রয়োজন ছিল না।

এদিকে মিশরে তরমুজের যে চাষ হতো সে বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের মাধ্যমে এই তথ্য উঠে আসে যে ৪ হাজার বছরের পুরানো মিশরীয় সমাধি কক্ষের দেয়ালে তরমুজের বীজ এবং ফলের চিত্র পাওয়া গেছে। এটা ধারণা করা হয় যে তরমুজকে খাবারের জন্য নয়, পানির মাধ্যম হিসাবে রাখা হয়ে ছিল। এছাড়া মমিতে থাকা তরমুজের চিহ্ন অনুযায়ী ধারাণা করা হয় আকারের দিক থেকে সেই সময়কার তরমুজের আকার অনেকটাই ছোট ছিল।

ইতিহাস ফারাওদের তরমুজ বিক্রির কোনো নজির পাওয়া যায়নি যেখানে তাদের সরাসরি সংযুক্ত থাকারও কোনো প্রমাণ নেই।

Link copied!