‘গণ্ডারের চামড়া’ কিংবা ‘মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভাণ্ডার’ দুটি প্রবাদই নেতিবাচক। এই দুই বাংলা প্রবাদেই গণ্ডারকে যেন দানব, শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আজ থেকে এক-দেড়‘শ বছর আগেও বাংলাদেশের বিভিন্নস্থানে ৩ প্রজাতির গন্ডারের দেখা পাওয়া যেত। ১৮৭২ সালে বাংলার সর্বশেষ জীবিত গন্ডারটিকে অর্থের লোভে তৎকালীন বৃটিশ সরকার পাঁচ হাজার পাউন্ডে লন্ডন চিড়িয়াখানায় বিক্রি করে দেয়।
গন্ডার একপ্রকার স্তন্যপায়ী তৃণভোজী প্রাণী। এটি রাইনোসেরোটিডি পরিবারের অন্তর্গত। বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ৩ প্রজাতির গন্ডারের বসতি ছিল যথাক্রমে: একশিঙ্গি বড় গন্ডার নেপাল সিকিম থেকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত। জাভান রিনোসিরোস সুন্দরবন, যশোর থেকে বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহসহ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত। এবং সুমাত্রান দুই শিঙ্গি গন্ডারের আবাস কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পর্যন্ত ছিল।
১৮৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম থেকে একটি দুই শিঙ্গি গণ্ডার ধরা হয়। যেটি ছিল গন্ডার। বাংলাদেশের শেষ জীবিত এই গন্ডারটির নাম ছিলো ‘বেগম’।
কেবল বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বেই মানুষ যেন গন্ডারের অকরাণ শত্রু। সংখ্যা কমতে কমতে ২০২০ সালের দিকে বিশ্বে গন্ডারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩০ হাজারে। ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই মানুষের হিংস্রতার কথা বুঝা যাবে। ১৯৭০ সালেও যেখানে সারাবিশ্বে ৭০ হাজারের বেশি কালো গন্ডার ছিল। এর মাত্র ২৫ বছর পর ১৯৯৫ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল মাত্র ২৪১০ টিতে নেমে এসেছিল।
বিশ্বজুড়ে গন্ডারের এই ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা পরিবেশবাদীদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। তাদরেই কয়েকজনের উদ্যোগেই এই দিবস পালিত হতে শুরু হয়। ২০১১ সালে দক্ষিন আফ্রিকার জেন ক্যাম্পবেল তার বান্ধবী রিশাকে এই ব্যাপারে একটি মেইল করেন যে, তিনি রাইনো বা গন্ডার রক্ষার সচেতনতা বাড়াতে একটি দিবস আরম্ভ করতে চান।
১৯৯০ এর দশকের শুরু থেকেই অনানুষ্ঠানিকভাবে এই দিবস পালিত হয়ে আসছিল। তবে ২০১১ সাল থেকে বৃহৎ পরিসরে এই দিবস পালন করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফেডারেশন, সেভ দ্য রাইনো ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল রাইনো ফাউন্ডেশন প্রভৃতি সংগঠন বিশ্বব্যাপী এই দিবস পালনের পাশাপাশি গন্ডার সংরক্ষণে কাজ করে করে যাচ্ছে।