রাতের বেলা প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী। পাশে স্থানীয় এক দাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তান প্রসবের। তবে দীর্ঘ সময় চেষ্টার পরও তিনি ব্যর্থ হলে রাত ১১ টার দিকে ওই নারীকে নিয়ে যাওয়া হয় এক মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে। সেখানে গিয়েও দেখা যায় দরজায় তালা ঝোলানো। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোন চিকিৎসক বা নার্স উপস্থিত ছিলেন না। এদিকে প্রসব বেদনা আরও বেড়ে যায় ওই নারীর। নিরুপায় হয়ে কেন্দ্রের ভবনের মাঠে রাত ১টার দিকে সন্তান জন্ম দেন ওই নারী। মা ও নবজাতক মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন পরিবারের লোকজন।
মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। সন্তান জন্ম দেওয়া ওই নারীর নাম লিমা বেগম। হারাগাছ ইউনিয়নের চরনাজিরদহ মফিজপাড়া গ্রামের শাহাদত হোসেনের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ এলাকার বেশির ভাগ মানুষ শ্রমিক। তাদের পক্ষে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসাসেবা নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই বেশীর ভাগ শ্রমিক পরিবারের অন্তসত্ত্বা নারীদের নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের একমাত্র ভরসা হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু সেখানেও স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নারীরা। দীর্ঘদিন ধরে রাতেই বেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এখানে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারাও ঠিকভাবে সেবা প্রদান করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
লিমা বেগমের স্বামী শাহাদত হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে স্ত্রী ও সন্তান বেঁচে গেছে। আর কিছু সময় নষ্ট হলে স্ত্রী-সন্তান দুইজনেই মারা যেত। গরীবের একমাত্র ভরসা আল্লাহ।’
হারাগাছ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এখানে দুজন দাই নার্সসহ তিনজন দায়িত্বে আছেন। যদিও ২৪ ঘণ্টা গর্ভবতী নারীদের সেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনজনের পক্ষে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।’
এ বিষয়ে রংপুর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইদুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমি এই দুঃখজনক ঘটনাটি জেনেছি। দরিদ্র মানুষের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে নিরাপদ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রগুলো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে জনবল কম থাকায় ২৪ ঘন্টা সার্ভিস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।