'হাম্পব্যাক' তিমির মুখে ঢুকে ফেরত আসা আসল পিনোকিও!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ১৩, ২০২১, ০২:৩৬ এএম

'হাম্পব্যাক' তিমির মুখে ঢুকে ফেরত আসা আসল পিনোকিও!

সাগরে বিশালদেহী 'হাম্পব্যাক' তিমির মুখ ঢুকে ফেরত এলেন এক মার্কিন চিংড়ি আরোহী। ইতালির লেখক কার্লো কলোডির লেখা শিশুদের গল্প পিনোকিও'র মত বড় মাছের মুখে ঢুকে ফেরত আসার ঘটনাকে অনেকের কাছে রোমাঞ্চকর মনে হলেও, আসলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরত এসেছিলেন তিনি।

ম্যাসাচুসেটসের প্রভিন্সটাউনের তীরবর্তী সমুদ্রে সাতার কাটার সময় হঠাৎ করেই ৩০-৪০ সেকেন্ডের জন্য এক দানব আকার 'হাম্পব্যাক' তিমির মুখের ভেতর ঢুকে যান মিখায়েল প্যাকার্ড। এরপর মাছ যখন তার মুখ থেকে পানি বের করে দেয়, তখন সমুদ্রে ছিটকে বের হয়ে আসেন তিনি। এ সময় তার হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত লাগা ছাড়া আর কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। এই ঘটনার পর মিখাইলের স্ত্রী তাকে এই পেশা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও ৪০ বছর ধরে করে আসা এই কাজ ছাড়তে পারেননি তিনি।

তিমি প্রজাতির মধ্যে 'হাম্পব্যাক' প্রায় ৫০ ফুট লম্বা হতে পারে, যার ওজন প্রায় ৩৬ টন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের ভাষ্যমতে বিশ্বে ৬০ হাজারের কাছাকাছি 'হাম্পব্যাক' তিমি রয়েছে।

মিখাইল (৫৬) ক্যাপ কোড টাইমসকে দেয়া বক্তব্যে বলেন, শুক্রবার তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে জ্যা'এন জে হ্যারিং কোভে তাদের নৌকা নিয়ে যান। আবহাওয়া সেদিন দুর্দান্ত ছিলো, আর পানিতে প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। তিনি ডব্লিউবিজেড-টিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি যখন সাঁতারের পোশাক পরে পানিতে ছাপিয়ে পড়লাম, হঠাৎ করে মনে হলো প্রচণ্ড ঝাঁকি খেয়েছি। সেই সঙ্গে আমার চারপাশ অন্ধকারে ঢেকে যায়। তিনি বলেন, 'মাছটি আমাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছিলো।'

প্রথমে মিখাইল ভাবে, তাকে বড় সাদা হাঙ্গর আক্রমণ করেছে, যা এই অঞ্চলে প্রায়ই সাতার কাটে। কিন্তু আমি চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এবং অনুভব করলাম, সেখানে কোন দাঁত নেই।'

'আর তারপরই আমি আবিষ্কার করলা, তিমি মাছের মুখে আছি আমি এবং সে আমাকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। আমি এখন মারা যাবো'- স্ত্রী ও দুই ছেলের কথা মনে করে এই কথাগুলো ভাবছিলেন মিখাইল।

তিনি বলেন, এরপর হঠাৎ করেই সে উপর দিকে উঠে আমাকে শূন্যে ছুড়ে ফেলে এবং আমি সমুদ্রের জলে আছড়ে পড়ি। আমি মুক্ত হয়ে পানিতে ভেসে রইলাম। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনাদের সামনে এসে আমি এ কথা বলছি।'

সেখানে থাকা নৌকার অন্য সঙ্গীরা এ সময় তার অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের পাইপের বুদবুদ তাড়া করে তাকে উদ্ধার করে। প্রভিন্সটাউনের অগ্নি নির্বাপক কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে নিশ্চিত করে জানায়, প্রভিন্সটাউন সমুদ্র তীর থেকে এক আহত চিংড়ি আরোহীকে উদ্ধারের জন্য সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে সাহায্যের আবেদন পায় তারা।

মিখাইল কেপ কোড হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরপর সাংবাদিকরা তাকে ছেঁকে ধরে।

অবশ্য ইচ্ছা করে মিখাইলকে 'হাম্পব্যাক' তিমি খাওয়ার চেষ্টা করেনি বলে জানিয়েছে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা। তারা জানায়, এই জাতের তিমি বড় করে মুখ হা করে থাকে এবং যতটা সম্ভব তার থেকে ছোট মাছ এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীকে গিলে ফেলে। এভাবেই শিকার করে বেঁচে থাকে তারা। মিখাইলের সঙ্গে যা হয়েছে তা নিছক দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছু নয় বলে জানান তারা। বাস্তবিক অর্থে কখনও কোন মানুষকে আক্রমণ করে তিমি মাছ খেয়ে ফেলেছে এমনটি শোনা যায়নি।

সূত্র: বিবিসি।

Link copied!