ছাত্রদলের হল কমিটিতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী থাকার অভিযোগ, যা বলছে ছাত্রদল

সালমান ইবনে সাঈদ শাওন/ ঢাবি প্রতিনিধি

আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম

ছাত্রদলের হল কমিটিতে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের কর্মী থাকার অভিযোগ, যা বলছে ছাত্রদল

ছবি: সংগৃহীত

সদ্যঘোষিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে বিগত ছাত্রলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার, ০৮ আগস্ট সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলে আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের তালিকা প্রকাশ করে ছাত্রদল। এরপর থেকে অভিযোগ করতে শুরু করে কমিটিতে পদ পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে যারা বিগত দিনে ছাত্রলীগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে ছিলেন।

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের আহমেদ জাবির মাহাম, হল শাখা ছাত্রদলের সদস্যপদ পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরাসরি এক দফার বিরোধিতা করেছিলেন। এ কারণে তার ডিপার্টমেন্ট থেকে তাকে বয়কট করা হয়।

শামসুন্নাহার হল ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক পদ পাওয়া নিতু রানী সাহা ছিলেন শামসুন্নাহার হল ছাত্রলীগের উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের ছাত্রদলের সদস্য সচিব জান্নাতুল ফেরদৌস পুতুলের বিরুদ্ধেও। অভিযোগ আছে শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল নোমানও ছিলেন হল ছাত্রলীগের কর্মী। রোকেয়া হল ছাত্রদলের সদস্য সচিব আনিকা বিনতে আশরাফের বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোঃ আবিদ হাসনাত এর বিরুদ্ধেও এসেছে একই অভিযোগ।

এরা ছাড়া এখনো পর্যন্ত সদ্য কমিটিতে পদ পাওয়া ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এসেছে।

সংগঠনের পক্ষ থেকে যা বলা হচ্ছে

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতীয়বাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস। তিনি বলেন, “প্রকাশিত কমিটিতে পদায়িত কেউ যদি অনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকেন কিংবা সদস্য ফরম ও কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় তথ্য গোপন করে থাকেন তবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তপূর্বক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

পদবঞ্চিতদের বিষয়ে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মতন একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াতে একই পদের জন্য একাধিক যোগ্য কর্মী থাকার কারণে সকলকে তার কাঙ্ক্ষিত পদে দায়িত্ব দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। আমাদের হল কমিটিসমূহ গঠনের ক্ষেত্রে এরকম অনেক কঠিন ও কষ্টকর সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয়েছে। আমরা আশা করবো সকলেই দল ও আদর্শের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন।”  

এ বিষয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, “যারা আমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে তাদেরকে আমরা কমিটিতে রেখেছি। এর মধ্যে আমরা আমাদের প্রাথমিক সদস্যপদ পূরণ করার মাধ্যমে তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার চেষ্টা করেছি। এখন কেউ যদি তথ্য গোপন করে থাকে আমরা প্রয়োজনে আবার যাচাই-বাছাই করব।”  

যাচাই-বাছাই করে সাংগঠনিকভাবে পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে একটা সিদ্ধান্তে আসার কথাও জানান ছাত্রদলের এই নেতা।

হলে হলে ছাত্র রাজনীতি ফেরা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে এটাকে কিভাবে দেখছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বাইরের কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ না এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব একটা স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বাংলাদেশের সব আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। হলগুলা কোনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোন অংশ না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাবরই তার রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য বেশি পরিচিত। হলে হলে আমরা দেখেছি যে আগস্টের পরে একটা গোষ্ঠী বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে বিরাজনীতিকরণ অংশ হিসেবে তারা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি চায় না। পরবর্তীতে হল কমিটি চায় না।  

“কিন্তু এই কথাগুলো যারা বলেছে আমরা দেখেছি তারাই পরবর্তী সময়ে হলগুলাতে সবার আগে কাজ শুরু করেছে ছোট ছোট টিম করে। বিভিন্নভাবে তারা হল কেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম করছে। তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতেই পারে। আমরা মনে করি, যেহেতু বিগত ১৭ বছর কোন ছাত্র রাজনীতি ছিল না। ছাত্র রাজনীতির নামে এক ধরনের অপরাজনীতি চর্চা করা হয়েছে।”

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নয় দফা ঘোষণা করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিগত দিনে ছাত্র রাজনীতির নামে সব অপরাজনীতি, একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপর যেকোন রাজনৈতিক কার্যক্রমে আসতে বাধ্য করাসহ শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এমন ধরনের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ছাত্র সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছি।”

নয় দফা বাস্তবায়নের আলোকেই ছাত্রদল কার্যক্রম চালিয়ে যাবে জানান এই ছাত্রনেতা। পাশাপাশি অতীতের মতো কোন জবরদস্তিমূলক নির্যাতন-নিপীড়নমূলক গণরুম সংস্কৃতির নূন্যতম কোন সুযোগ থাকবে না বলেও জানান তিনি।

নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, দেশবিরোধী ও যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না বা দেশ নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করবে তারা ছাড়া বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে তার যে সাংবিধানিক অধিকার সে অধিকারের জায়গা থেকে সবাই তার মত প্রকাশ করতে পারবে। কেউ যেন তা বাধাগ্রস্ত না করতে পারে, সে ব্যাপারেও ছাত্রদল সচেষ্ট থাকবে।”  

অভিযোগের প্রেক্ষিতে কতদিনের মধ্যে তারা ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা আজ কমিটি ঘোষণা করেছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুই একদিনের মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। আমাদের জায়গা থেকে যাচাই-বাছাই করছি।”

Link copied!