জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
নানা সমালোচনা ও বিতর্কের পর গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পিট হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সম্ভাব্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ফক্স নিউজের সাবেক এই উপস্থাপক ও আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেন। তবে এর পর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে।
অভিযোগ উঠতে থাকার প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ভোটাভুটিতে হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। অনেক চড়াই–উতরাই পেরিয়ে অবশেষে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। অবশ্য সিনেটে পক্ষে–বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় নিয়োগ চূড়ান্ত করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সকে ভোট দিতে হয়।
যৌন নিপীড়ন, অতিরিক্ত মদ্যপান, স্ত্রীকে নির্যাতনসহ হেগসেথকে নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। তাকে নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের বিষয়গুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক:
অভিজ্ঞতার অভাব
আফগানিস্তান ও ইরাকে এবং কিউবার কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে মার্কিন বন্দিশালায় দায়িত্ব পালন করেছেন হেগসেথ। এখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ১৩ লাখ সক্রিয় সদস্য ও সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করা প্রায় ১০ লাখ বেসামরিক মানুষকে নেতৃত্ব দেবেন। তাদের নেতৃত্ব দেয়াই শুধু নয়, এ খাতের ১ লাখ কোটি ডলারের বিশাল বাজেটও সামলাতে হবে তাকে।
অনেকে সমালোচনা করে বলছেন, এত বড় কর্মী বাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হেগসেথের নেই। আইনপ্রণেতাদের হেগসেথ নিজেই বলেছেন, তার সর্বোচ্চ ১০০ জনকে নেতৃত্ব দেয়ার ও ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বরাদ্দ সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
সামরিক নিয়মকানুনের বিরোধিতা
বছরের পর বছর যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীসেনা মোতায়েনের কঠোর বিরোধিতা করে এসেছেন হেগসেথ। এ নিয়েও তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন। এ ছাড়া অতীতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগের সমালোচনা করতে দেখা গেছে। এমনকি তিনি তার সর্বশেষ বইতে প্রশ্ন করেছেন যে শীর্ষ মার্কিন জেনারেল কৃষ্ণাঙ্গ বলেই কি এ পদ পেয়েছেন কি না।
অবশ্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরির পর সিনেটরদের সমর্থন পেতে এমন অবস্থান থেকে পিছু হটেন হেগসেথ। তিনি রিপাবলিকান সিনেটর জনি আর্নেস্টের মতো সেনা কর্মকর্তাদের সমর্থন পান। প্রতিনিধি পরিষদের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির রিপাবলিকান সদস্য আর্নেস্ট। এ কমিটিতে থাকা ১৪ রিপাবলিকান সদস্যের ১৩ জনই হেগসেথকে সমর্থন দেন। তবে কমিটিতে থাকা ডেমোক্র্যাটদের কেউ সমর্থন দেননি।
যৌন নিপীড়ন
২০১৭ সালে যৌন নিপীড়নের একটি অভিযোগ আছে পিট হেগসেথের বিরুদ্ধে। ক্যালিফোর্নিয়া পুলিশের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ওই বছর এক নারী হেগসেথের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন। তবে হেগসেথকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়নি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন।
অতিরিক্ত মদ্যপান
হেগসেথের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মদ্যপান ও সামরিক কর্মকর্তাদের সংস্থাগুলোয় আর্থিক অব্যবস্থাপনায় যুক্ত থাকার অভিযোগও আছে। অবশ্য নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই হেগসেথ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দায়িত্ব পেলে তিনি মাদক গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। এ ছাড়া আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কথা শিকার করলেও তার দাবি, তিনি অন্যায় কিছু করেননি।
স্ত্রীকে নির্যাতন
সবশেষ সাবেক স্ত্রী সামান্থাকে নির্যাতনের একটি অভিযোগ উঠেছে হেগসেথের বিরুদ্ধে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হেগসেথের ভাইয়ের সাবেক স্ত্রী ড্যানিয়েল হেগসেথ মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির কাছে এ–সংক্রান্ত একটি হলফনামা দিয়েছেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক দ্বিতীয় স্ত্রীর ওপর নিপীড়ন চালাতেন হেগসেথ।
হলফনামায় ড্যানিয়েল লিখেছেন, পিট হেগসেথ তার সাবেক স্ত্রী সামান্থার ওপর নির্যাতন চালাতেন। নির্যাতনের ধরন কেমন ছিল, তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি ড্যানিয়েল। বলেছেন, তিনি নিজ চোখে সামান্থাকে শারীরিক বা যৌন নিপীড়নের শিকার হতে দেখেননি। তবে ওই সময় সামান্থা তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন ও স্বামীর হাত থেকে বাঁচার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হলে একটি সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করতেন।
তবে সংবাদমাধ্যম এনবিসিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেগসেথের সাবেক স্ত্রী সামান্থা লিখেছেন, ‘বিবাহিত জীবনে আমার ওপর কোনো শারীরিক নির্যাতন হয়নি। এটাই আপনাদের দেয়া আমার একমাত্র বিবৃতি। আমি আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, পিটের সঙ্গে আমার বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে আমি কথা বলছি না এবং বলবও না। দয়া করে এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন।’
এদিকে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় হেগসেথের পক্ষে কথা বলে গেছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদে ৪৪ বছর বয়সী হেগসেথকে মনোনীত করার কথা জানিয়ে নভেম্বরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি লেখেন, ‘হেগসেথ একজন বলিষ্ঠ ও স্মার্ট মানুষ। তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির একজন সত্যিকারের বিশ্বাসী। শত্রুদের আমি জানাতে চাই, হেগসেথের নেতৃত্বে মার্কিন সামরিক বাহিনী আবার দুর্দান্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই পিছিয়ে পড়বে না।’
হেগসেথের মাদক গ্রহণের বিষয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন ট্রাম্প। এনবিসির ওয়েলকার ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, হেগসেথের মাদক গ্রহণের যে ইতিহাস আছে, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, অন্যরা তাকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তাকে ভালো করে চেনেন–জানেন, এমন মানুষদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি এবং তারা বলেছেন, তার (হেগসেথ) মাদক গ্রহণের সমস্যা নেই।’
সূত্র: প্রথম আলো।