এনসিপি নেতার বক্তব্যে ‘স্বৈরাচারের পদধ্বনি’ শুনছেন বিএনপির জাহিদ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৪:২৭ পিএম

এনসিপি নেতার বক্তব্যে ‘স্বৈরাচারের পদধ্বনি’ শুনছেন বিএনপির জাহিদ

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘হবে না’ বলে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাওয়ারী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ‘স্বৈরাচারের পদধ্বনি’ শুনতে পাওয়ার কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বুধবার, ১৩ আগস্ট শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আজকে আমরা অনেক কথা শুনতে পাইকেউ কেউ বলেন, হুমকি দেন যে, আগামী নির্বাচন (ফেব্রুয়ারি) হতে দেবেন না।

“মনে হচ্ছে, সেই স্বৈরাচারের যে আচরণ ছিল, স্বৈরাচারের যে কথা ছিল, সেই ধরনের কথার পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই। আমি আহ্বান জানাব, আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকেন, ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না নির্বাচনী অভিযাত্রাকে।”

আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জাতীয় যুব সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, “নির্বাচনের ডেট ঘোষণা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।”

এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “যদি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হয়, আমার যে ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, রক্ত দিয়েছিল সংস্কারের জন্য, তাহলে কবরে গিয়ে তার লাশটা ফেরত দিতে হবে এই সরকারকে।

“আমার যে ভাইয়ের হাতটা চলে গিয়েছিল, যদি সংস্কার কাজ শেষ না করে নির্বাচন হয়, তাহলে এই সরকারকে আমার ভাইয়ের হাতটা ফিরিয়ে দিতে হবে৷ যে মায়ের বুক খালি হয়েছিল, ওই মায়ের বুকের সন্তানকে ফেরত দিতে হবে।”

অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছে। নির্বাচন কমিশনও ফেব্রুয়ারিতে ভোট করতে এর দুই মাস আগে সূচি ঘোষণার কথা বলেছে।

দ্রুত নির্বাচনের দাবি করে আসা বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। পরে জামায়াতও ফেব্রুয়ারির ভোট নিয়ে তাদের আপত্তি না থাকার কথা বলেছে।

তবে সংস্কার ও অভ্যুত্থান ঠেকানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচার না হওয়ার আগে নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। অভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত দলটি নির্বাচনের আগে এ দুই দাবির বাস্তবায়ন চেয়ে আসছে।

এনসিপি নেতার এই বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “সেজন্য আজকে আমরা আশঙ্কিত হই অনেক সময় যে, নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।”

প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমরা শুনতে পাই, সরকারের একটি অংশ, এখনো যারা সরকারের সাথে সম্পৃক্ত আছেন, সেই অংশের পক্ষ থেকে কেউ কেউ যখন বলেন, নির্বাচন এটা না করলে হতে দেব না, ওটা না করলে হতে দেব না(তারা) আবার গণতন্ত্রের কথা বলবেন।”

বেলা ১১টায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব এর নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ এবং মহাসচিব ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিলসহ নেতাদের নিয়ে জাহিদ হোসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি।

এ সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অধ্যাপক একেএম আজিজুল হক, বিজন কান্তি সরকার, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলামসহ প্রবীণ-নবীন চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

৯ আগস্ট ড্যাবের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচনে ‘হারুন-শাকিল’ পরিষদ বিজয়ী হয়।

‘পিআর পদ্ধতি মানুষ বোঝে না’

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের দাবির প্রসঙ্গ টেনে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “এদেশের মানুষ গণতন্ত্রকামী মানুষ। এদেশের মানুষ জানতে চায় তার প্রতিনিধি কে? তাদের সরাসরি দেখতে চায়।”

পিআর পদ্ধতি কী, তা দেশের মানুষ জানে না এবং এ পদ্ধতিতে কখনো ভোট দেয়নি তুলে ধরে তিনি বলেন, “পৃথিবীর অনেক দেশে পিআর আছে, নন-পিআর আছে। কিন্তু বড় গণতান্ত্রিক দেশ বলেন, ভারত, তারপরে ইউকে (যুক্তরাজ্য), ইউএসএ (যুক্তরাষ্ট্র)। ওইসব দেশে কি পিআর পদ্ধতি অনুসরিত হচ্ছে? কোথাও না। কাজেই মনে রাখতে হবে, জনগণ তার প্রতিনিধিকে সরাসরি দেখতে চায় নির্বাচনের মাধ্যমে।”

জাহিদ হোসেন বলেন, “পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ করার জন্য চিন্তাভাবনা করছেন তারাই হয়ত পিআর পদ্ধতির কথা বলে থাকেন।

“আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জনগণের মনের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। এই জনগণ বিগত ২০০৮ সাল থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত তাদের যে মালিকানা সেটা ফেরত পায় নাই। বিভিন্ন ধরনের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু মানুষের আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, নির্বিঘ্নে দেব, নিঃসংকোচে দেব।”

‘যারা হুমকি দিচ্ছে তারা কী ভেবেছে জনগণ কী চায়’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “যারা আজকে ধমক দেন নির্বাচন হতে দেবেন না। তারা কি ভেবেছেন, জনগণ কী এটা চায়, জনসমর্থন কী এটাতে আছে?

“আপনারা মব কালচার সৃষ্টি করেছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন? দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, গত এক বছর যাবত কী ধরনের পড়াশুনা হচ্ছে, সেটি কী আপনারা লক্ষ্য করেছেন? আপনারা বলেন, নতুন প্রজন্ম। আমরা কী পুরনো প্রজন্ম? আপনারা কী নতুন প্রজন্ম? কখনোই না।”

তিনি বলেন, “২৪ এর আন্দোলন একটি ঐক্যবদ্ধ ছাত্র-জনতার আন্দোলন। কোনো একক গোষ্ঠির আন্দোলন নয়।

“কাজেই কোনো অবস্থাতে ধমক দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখবেন, এটা হবে না। ইতিহাস শিক্ষা দেয়, যারা ৭৩ এ ছিলেন তারাও যেমন দাবিয়ে রাখতে পারেন নাই। আর বিগত স্বৈরাচার অনেক ধমক, অনেক প্রশাসন, অনেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অনেক গুম, অনেক শহীদ, অনেক পঙ্গুত্ব বরণ করিয়েছেন। তারপরও মানুষকে দাবিয়ে রাখা যায়নি, ওনাদের শেষ রক্ষা হয় নাই।”

সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, “চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে আমরা সবাই একসাথে ছিলাম, এক সাথে থাকি এবং দেশের মানুষের ওপর দায়িত্ব দেইতারা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করুক এবং সেই নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ হবে।

“তাহলেই শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে, পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষগুলো, তাদের যে কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে। আমাদের এখন দায়িত্ব হচ্ছে, সবাইকে সাথে নিয়ে আগামীতে এমন একটি জাতীয় নির্বা্চনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে মানুষ নির্বিঘ্নে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।”

Link copied!