গণঅভ্যুত্থান একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না: নাহিদ ইসলাম

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১৯, ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

গণঅভ্যুত্থান একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না: নাহিদ ইসলাম

ছবি: সংগৃহীত

গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে জানিয়ে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়, ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে, সেরকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।”

শনিবার, ১৯ এপ্রিল জাতীয় সংসদের এলডি হলে এনসিপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের শুরুতে এসব কথা বলেন নতুন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। 

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর একীভূত সুপারিশ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির জন্য কাজ করছে ঐকমত্য কমিশন।

পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় ও ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে শনিবার এই বৈঠক শুরু হয়।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারি, যুগ্ম-আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম-আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

দলের পক্ষে সূচনা বক্তব্যে নাহিদ বলেন, “এনসিপি সংস্কার বলতে মৌলিক সংস্কার বোঝে, যে সংস্কার করলে রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে। কারণ আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ ঘটেছিল। আমাদের সংবিধানে একব্যক্তি কেন্দ্রীক একটি কাঠামোর বীজ বপন ছিল। ফলে সেই রাষ্ট্রকাঠামোকে অক্ষুন্ন রেখে যেই ক্ষমতায় যাক তার ভিতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠার প্রবণতা থাকবে।

“সেই জায়গায় রাষ্ট্রের সংস্কার, সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।”

ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই এনসিপি একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আন্দোলনের নেতাদের পাশাপাশি জনগণের চাওয়ায় রাষ্ট্র সংস্কারে জন্য একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যে শাসন আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত বসে ছিল, তাকে আপনারা দৃঢ়তা, সাহসিকতা দিয়ে, নির্ভীক, অবিচল প্রচেষ্টা দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছন, যারা প্রাণবাজি রেখে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিজয় হয়েছে।

“সে বিজয়ের পাশাপাশি আপনারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান এবং আপনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে যে আকাঙ্খা মানুষের মধ্যে ছিল সেটা মূর্ত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।”

আলী রীয়াজ বলেন, “এখন আমাদের কাজ সকলে মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শাসন ফেরত না আসে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী রূপ নেয়। যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমস্ত রকম নিপীড়ন মোকাবিলা করতে পারি। আমরা চাই জাতির আকাঙ্ক্ষার জায়গায় জাতীয় সনদ তৈরি করতে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। এতে সহসভাপতি হিসেবে রয়েছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।

Link copied!