হেভি মেটাল কিংবদন্তি ওজি ওসবার্ন মারা গেছেন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

হেভি মেটাল কিংবদন্তি ওজি ওসবার্ন মারা গেছেন

ছবি: সংগৃহীত

রকসংগীতের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও স্বীকৃত মুখগুলোর একজন ওজি ওসবার্ন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে তার মৃত্যু হয়।

ওসবার্ন বিখ্যাত ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথের প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জন্ম দেন হেভি মেটাল ঘরানার ‘আয়রন ম্যান’ ও ‘প্যারানয়েড’-এর মতো গান।

মাত্র তিন সপ্তাহ আগেই নিজের শহর বার্মিংহামে জীবনের শেষ কনসার্টে গান করেন ‘প্রিন্স অব ডার্কনেস’ নামে পরিচিত ওসবার্ন। মঞ্চে ছিলেন তার অনুপ্রেরণায় গড়ে ওঠা মেটালিকা, গানস এন’রোজেসসহ আরও অনেকে রক ব্যান্ডের কিংবদন্তি শিল্পীরা।

এক বিবৃতিতে ওসবার্নের পরিবার বলেছে, ‘এই খবর জানানোর ভাষা আমাদের নেই। ওজি ওসবার্ন আজ (মঙ্গলবার) সকালে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তিনি ছিলেন ভালোবাসায় ঘেরা।’

ওসবার্নের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করা হয়নি। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৯ সালে ওসবার্নের পারকিনসন রোগ ধরা পড়ে।

ব্ল্যাক সাবাথ থেকে একক ক্যারিয়ার

আসল নাম জন মাইকেল ওসবার্ন। ১৫ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে নানা অস্থায়ী কাজ করেছেন তিনি। এমনকি চুরি করে কিছুদিন জেলেও ছিলেন। এরপর তিনি ঝুঁকে পড়েন সংগীতের দিকে।

১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে গিটারিস্ট টনি ইয়োমি, বেসিস্ট গিজার বাটলার ও ড্রামার বিল ওয়ার্ডের সঙ্গে গড়ে ওসবার্ন তোলেন ব্যান্ড ব্ল্যাক সাবাথ।

ব্লুজঘেঁষা অথচ ভারী, ধীর ও গা ছমছমে সংগীতে উঠে আসে অতিপ্রাকৃত ইঙ্গিত, শুরু হয় হেভি মেটালের পথচলা। ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ব্যান্ডটির ব্ল্যাক সাবাথ। এরপর একে একে আসে ‘প্যারানয়েড’, ‘মাস্টার অব রিয়েলিটি’র মতো বহু প্ল্যাটিনাম হিট। 

১৯৭৮ সালে ব্যান্ড থেকে ছাঁটাই হলে ওসবার্ন শুরু করেন একক ক্যারিয়ার। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ‘ব্লিজার্ড অব অজ’ নামের অ্যালবাম। এই অ্যালবামে ছিল বিখ্যাত গান ‘ক্রেজি ট্রেইন’। পরের বছর আসে ‘ডায়েরি অব আ ম্যাডম্যান’। বিক্রি হয় ৫০ লাখ কপির বেশি।

রক তারকা থেকে রিয়েলিটি শোতে

মঞ্চে ওসবার্নের আচরণ ছিল পাগলামি দিয়ে ভরা। একটি কনসার্টে তিনি ভুল করে একটি জীবন্ত বাদুড়ের মাথা কামড়ে দেন, ঘটনাটি কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।

মাদকসেবন ও মদ্যপানের আসক্তির কারণে নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন ওসবার্ন। এই আসক্তির অন্ধকার দিকও ছিল।

১৯৮৯ সালে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী শ্যারনকে খুনের চেষ্টা করায় গ্রেপ্তার হন ওসবার্ন। আদালতের নির্দেশে ছয় মাস পুনর্বাসনে কাটাতে হয় তাকে। শ্যারন পরে মামলা না করায় দাম্পত্য জীবন টিকে যায়।

২০০০-এর দশকে এমটিভির রিয়েলিটি শো ‘দ্য ওসবার্নারস’ ওসবার্নকে এক ভিন্ন রূপে হাজির করে। ওসবার্ন বলেছিলেন, ‘মঞ্চে আমি যা করি, সেটা শুধু একটা অভিনয়। আমি আসলে একান্তেই পারিবারিক মানুষ।’

শেষ গান, বিদায় অনুভূতি

২০২২ সালে কমনওয়েলথ গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই মঞ্চ থেকে দূরে ছিলেন ওসবার্ন। ২০২০ সালে জানান, তিনি পারকিনসনে আক্রান্ত।

তবু ওসবার্ন বিদায়ী কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন। ৫ জুলাই বার্মিংহামের অ্যাস্টনের বাড়ির কাছের ভিলা পার্ক স্টেডিয়ামে বসে শেষবারের মতো তিনি গাইলেন প্রিয় সব গান। কালো সিংহাসনে বসে, হাত নেড়ে, চোখ বড় করেএক অনবদ্য বিদায় নেন তিনি।

কিংবদন্তির বিদায়

ওসবার্নের মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন অনেক তারকারোনি উড (রোলিং স্টোনস), মেটালিকা, স্যামি হ্যাগার (ভ্যান হ্যালেন), ব্রায়ান মে (কুইন), এলটন জন, বিলি জো (গ্রিন ডে)।

এলটন জন বলেছেন, ‘ওজি ছিলেন আমার প্রিয় বন্ধু এবং রক সংগীতের পথিকৃৎ। তিনি থাকবেন গানের দেবতাদের অমর তালিকায়।’

ওসবার্ন রেখে গেছেন স্ত্রী শ্যারন, তাদের সন্তান অ্যাইমি, কেলি ও জ্যাক এবং নাতি-নাতনিদের। ওসবার্নের আগের সংসারের সন্তান জেসিকা, লুইস ও এলিয়টও আছেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Link copied!