ছবি: সংগৃহীত
সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে ‘আটকাপড়া’ জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নেতারা গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় ছেড়েছেন।
বুধবার বিকালে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এনসিপি নেতাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটে। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে শহরের লঞ্চ ঘাট এলাকায় গোপালগঞ্জ সরকারি কলেজের সামনে গাড়িবহরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে এনসিপি নেতারা শহরের পৌর পার্ক এলাকায় সমাবেশ করেছিলেন। সেখান থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় গাড়ি বহর নিয়ে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর পরই শত শত জনতা সেখানে হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
এরপরই পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এনসিপি নেতাদের গাড়িবহর ঘুরিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
বিকালে অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, “এনসিপির নেতা কর্মীরা গোপালগঞ্জ এসপি অফিসে আটকা ছিলেন। পরে সোয়া ৫টার দিকে ‘ক্লিয়ার’ হলে তারা চলে যান।”
এ সময় তিনি আরও জানান, একজনের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে তবে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গোটা এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ফলে মানুষের পক্ষে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় চত্বরে এনসিপি নেতাদের সাঁজোয়া যানে উঠার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছেন। এক মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে একটি সাঁজোয়া যানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন এনসিপি নেতা সারজিস আলম, তিনি বেরিয়ে এসে হাসনাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে আবার সাঁজোয়া যানে প্রবেশ করেন। সেখানে থাকা সেনাসদস্যরা তাদের সাঁজোয়া যানের ভেতরে ঢুকতে সাহায্য করেন। সারজিস ও হাসনাত আব্দুল্লাহ গাড়ির ভেতরে ঢোকার পর সেখানে প্রবেশ করেন। তারপর সেখানে এনসিপি নেতা আখতার হোসেন আসেন। কিন্তু তাকে সেই গাড়িতে না তুলে পাশের একটি গাড়িতে তোলা হয়।
আরেকটি ভিডিওতে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকেও একই ধরনের সাঁজোয়া যানে উঠতে দেখা গেছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে থাকা একজন সাংবাদিক বলেন, তিনি দুটি গাড়িতে করে নেতাদের চলে যেতে দেখেছেন। গাড়ি দুটো পুলিশ লাইনের দিকে গেছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অবস্থানের বিষয়ে এর আগে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আলাউদ্দিন মোহাম্মদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হয়ে পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছেন এটি জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকা অতিক্রম করে পদযাত্রার পরবর্তী কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।”
এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে দফায় দফায় হামলা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও গুলির শব্দে গোটা গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
হাতবোমা, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপের বিকট শব্দ আর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের চলাচলও সীমিত হয়ে পড়েছে।
এই অবস্থায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধরা জারি করা হয়েছে।