মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ১২, ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম

মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি

রোববার সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দলটি বরাবরের মতোই ‘সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের’ দাবি জানিয়ে এসেছে। সরকারের সমালোচনায় বিভোর বিএনপিকে তুলোধুনো করতেও ছাড়েননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা। মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে আবর্তিত হচ্ছে দেশের রাজনীতি।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন, “বিএনপি নেতারা ক্লান্ত, হতাশ।” তার এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ১০ মে নয়াপল্টনে এক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মন্তব্য করেছেন, “বিএনপি নেতারা কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, তবে হতাশ নয়।”

“এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবৈধ সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এই সরকার কেন এতো উদাসীন? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দেশের নাগরিকদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব”
- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মহাসচিব, বিএনপি

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতারা কিছুটা ক্লান্ত, তবে হতাশ নয়: গয়েশ্বর

একই দিন নির্বাচন নিয়ে চলছে তামাশা। চারদিকে চলছে লুটপাটের সংস্কৃতি। এই দুঃশাসন জনগণ বেশি দিন মানবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, “এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

শনিবার নয়াপল্টনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা

“দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি”
এদিকে গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের এক বিক্ষোভ সমাবেশে আওয়ামী লীগ নয়, ‘অদৃশ্য শক্তি’ দেশ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ দাবি করে, তারা দেশ চালাচ্ছে। প্রকৃত অর্থে কি তারা দেশ চালাচ্ছে? তারা দেশ চালায় না, এক অদৃশ্য শক্তি দেশ চালাচ্ছে। যাদের নির্দেশে তারা আজ বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে।”

“সংকট উতরে যায়নি, আরও বেড়েছে”
রোববার (১২ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “সরকার মনে করেছে নির্বাচনের পর সংকট উতরে গেছে। কিন্তু সংকট উতরে যায়নি, আরও বেড়েছে।”

আরও পড়ুন: দুঃশাসন মানবে না জনগণ: রিজভী

এ সময় বিএনপির আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলন এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”

শনিবার নয়াপল্টনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

সংবাদ সম্মেলনে তিনি মন্তব্য করেন, “তথাকথিত উন্নয়নের দোহাই দিয়ে যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় নৈতিকতা এবং মূল্যবোধকে বিসর্জন দেওয়া হয়, জনগণের কাছে সেটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয় না। মনে রাখা প্রয়োজন, জীবন-জীবিকার দ্বন্দ্বে জীবিকার কাছে যেন জীবন হেরে না যায়।”

এদিকে গত ১১ মে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী সড়কে আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “ভারতের সঙ্গে বিএনপি যে শত্রুতা করেছিল, তাতে লাভ হয়নি। শত্রুতার কারণে সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস জন্মেছিল। শেখ হাসিনা সব সংশয়-সন্দেহ-অবিশ্বাস ভেঙেছেন। ভারত এখন আমাদের বন্ধু।”

আরও পড়ুন: সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় বিএনপি: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেছিলেন, “বিএনপি নেতারা হঠাৎ চাঙা হয়ে গেছেন। এর কারণ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তারা আবার ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর। লু আসছেন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে। বিএনপির স্বপ্নপূরণের জন্য নয়।”

শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের

রোববার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়টি ওঠানো হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কে এলো না গেল এটা নিয়ে বিএনপি আগ্রহী না। বাংলাদেশের জনগণই আমাদের ভরসা। আমাদের পুরো আস্থা (জনগণ)। এর ওপরেই আমরা দাঁড়িয়ে থাকি।”

রোববার জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী

“আওয়ামী লীগের ঘাড়ে আরব্য রজনীর দৈত্য”
রোববার শেরেবাংলা নগর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের নিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও জিয়ারত করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভী।

আরও পড়ুন: জনগণ থেকে দূরে সরাতে পারবেন না: শেখ হাসিনা

জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি মন্তব্য করেছেন, “আওয়ামী লীগের ঘাড়ে আরব্য রজনীর দৈত্য চেপে বসেছে।

“দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে”
রোববার সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়েবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবেলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত মার্চে সিপিডির এক রিপোর্টেও জনস্বাস্থ্যের এক ভয়ংকর চিত্র ফুটে উঠেছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার খেতে পারছেন না। গত মার্চেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বা বিএফএসএর শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যন্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।”

শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশে জড়ো বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতিষ্ঠানের নেতাকর্মীরা

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রসংঘ কি ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বা রাখা উচিত, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছাড়া আরও কয়েকটি দেশ এমন একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইইউয়ের খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা র‌্যাপিড অ্যালার্ট সিস্টেম ফর ফুড অ্যান্ড ফিড বা আরএসএফএফ, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলেছে, ইইউয়ের রপ্তানি করা ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার উপযোগী উপাদান পেয়েছে ইইউ।”

আরও পড়ুন: স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে: নানক

“৫২৭ পণ্যের মধ্যে ৩৩২টি খাবার পণ্যের উৎস ভারতে”
তিনি আরও বলেন, “২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আরএএসএফএফ জানিয়েছে, ৫২৭ পণ্যের মধ্যে ৩৩২টি খাবার পণ্যের উৎস ভারতে। বাকি পণ্যগুলো সরাসরি ভারতের না হলেও সেগুলোতে ভারতের ট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। এসব ভোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে, বাদাম, তিল বীজ, ভেষজ, মশলা, ডায়েবেটিক জাতীয় খাবার। এসব পণ্যের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান ইতিলিন অক্সাইড শনাক্ত করা হয়েছে। এই রাসায়নিক উপাদান মানব দেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি লিম্ফোমা ও লুকেমিয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের পর ভারতের ৮৭ পণ্যের চালান ইইউভুক্ত দেশগুলোতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।”

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, ভারতের ডেকান হেরাল্ড, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসসসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

রোববার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবৈধ সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এই সরকার কেন এতো উদাসীন? জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দেশের নাগরিকদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেওয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।”

আরও পড়ুন: “বিদ্যুত গেল কোথায়?”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৫২৭ পণ্য সম্পর্কে খোদ ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রামাইয়া অ্যাডভান্সড টেস্টিং ল্যাবের চিফ অপারেটিং অফিসার জুবিন জর্জ জোসেফ বলেছেন, এসব পণ্যে ইথিলিন অক্সাইড ছাড়াও আরও দুটি রাসায়নিক বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদজ্জনক হলো ইতিলিনগ্লাইকোল। যেটি কাশির সিরাপে ব্যবহার করা হয়। এর ফলে শিশুদের মৃত্যুও পর্যন্ত হতে পারে।”

শনিবার নয়াপল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস

তিনি আরও বলেন, “এ অবস্থায় জুবিন জর্জ জোসেফ পরামর্শ দিয়ে বলছেন, সব দেশেরই উচিত, নিজ নিজ দেশে আমদানি পণ্য পৌঁছার পর পণ্যের নিরাপত্তা মান পরীক্ষা করা। আমদানি করা পণ্য পৌঁছা সংশ্লিষ্ট দেশে পৌঁছা মাত্রই জনগণের ক্রয়ের জন্যে বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এর আগেও ২০২২ ও ২০২৩ সালে ১২১ ভারতীয় পণ্য মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কিন্তু এরপরেও পণ্যের উৎস দেশটি এসব পণ্য ত্রুটিমুক্ত করতে উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।”

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি: মির্জা আব্বাস

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “স্থায়ী কমিটির সভায়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, দেশে ভয়াবহ সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও অনিয়ম চলছে। সরকারি দলের সমর্থক, ঋণ খেলাপি ও অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যেহেতু এই সরকারের কোনো স্তরেই জবাবদিহিতা নেই সেহেতু লাগামহীনভাবে ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, জনগণের অর্থ লোপাটের মাধ্যমে একটি বিশেষ গোত্র তৈরী করা হচ্ছে। যারা এই অবৈধ সরকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। সভায় অবৈধ তথ্য-প্রবাহে বাধা দানের প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হয় ও অবিলম্বে অবৈধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সব ধরনের অসাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা আইন প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।”

Link copied!