ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম
ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন বলে আলোচনা উঠেছে। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে একদিকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা যখন ভারতে, অন্যদিকে নেতা-কর্মীদের দেশছাড়া এবং হামলা-মামলার শিকার, তখন অনলাইনে উপস্থিতি ছাড়া আর তেমন কোথাও আওয়াজ নেই দলটির।
আওয়ামী লীগের এমন নাজুক পরিস্থিতিতে দলটির মুখপাত্র হিসেবে খুঁজছে একজন গ্রহণযোগ্য ও ক্লিনইমেজের মুখ। আর এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুপরিচিতির জন্য নাম উঠে আসছে সাবের হোসেন চৌধুরীর, এমনটি জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। গত বছরের ৬ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হলেও জামিনে এখন মুক্ত আছেন। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে তিনি এখনো দেশে আছেন বলে গুঞ্জন আছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ঢাকা-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনি ঢাকা-৯ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মন্ত্রিসভায় তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ১৯৯৯ সালে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি ২০০১-২০০৮ পর্যন্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সচিব হিসেবেও কাজ করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালের জানুয়ারি এবং অক্টোবর মাসে তিনি কারাগারে বন্দী থাকেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাকে আখ্যায়িত করে ‘বিবেকের বন্দি’ হিসেবে। সেই সময় এই সংস্থাটি তার মুক্তির দাবিতে ‘আর্জেন্ট অ্যাকশন’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রচার চালিয়েছিল।
ক্রীড়া প্রশাসনের সঙ্গেও তিনি ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন; ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের-আইসিসি পূর্ণ সদস্যপদ এবং টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে। ক্রিকেট প্রশাসনে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে মর্যাদাপূর্ণ এমসিসির-এমসিসি আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়।
শুধু দেশের রাজনীতি নয়, সাবের হোসেন চৌধুরী বিদেশ পরিমণ্ডলেও বেশ সুপরিচিত। প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে ২০১৪-২০১৭ সালে তিনি সর্বপ্রথম জেনেভা ভিত্তিক ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়ন-আইপিইউ-এর ২৮তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বব্যাপী শান্তি ও গণতন্ত্রে তার অসামান্য অবদানের প্রেক্ষিতে সংস্থাটি তাকে আজীবন সম্মানিত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব প্রদান করেন। ইন্টার-পার্লামেন্টারী ইউনিয়নে ১৭৯টি দেশের জাতীয় সংসদ সমূহের ৪৫,০০০ সদস্য রয়েছে যারা বিশ্বের ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত, আইপিইউ মূলত বিশ্বের মহান জাতীয় সংসদ ভিত্তিক একটি সংগঠন, যা বিশ্বব্যাপী কার্যকরি সংসদ এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংলাপের আয়োজন করে।
একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদের সংশোধন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তার প্রচেষ্টায় জাতীয় সংসদে ‘বন্দী নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু প্রতিরোধ আইন’ এবং ‘কুষ্ঠ রোগীদের পৃথকীকরণের আইন’ পাস হয়। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সাবের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৬১ সালে। তার পিতৃ-ভিটা ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলায়। তার বাবা কর্ণফুলী গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান হেদায়েত হোসেন চৌধুরী। তার অন্য দুই ভাই হলেন সাঈদ হোসেন চৌধুরী ও সাদেক হোসেন চৌধুরী। হেদায়েত চৌধুরীর বড় ছেলে সাঈদ হোসেন চৌধুরী এইচআরসি শিল্পপরিবার ও ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি। মেজো ছেলে সাদেক হোসেন চৌধুরী মাল্টি ড্রাইভ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সাবের হোসেন চৌধুরী যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ (এসওএএস) থেকে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও, ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিপ্লোমা গ্রহণ করেন।
তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার স্বীকৃতি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে তার যোগ্যতার স্বীকৃতি বহন করে। দলে ও সংসদে তার অবস্থান এবং কূটনৈতিক দক্ষতা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ভাবছে দলটি।