‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কি ও কেন

গোলাম রাব্বানী

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫, ১২:১৬ পিএম

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ কি ও কেন

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার কারনে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হচ্ছে। দুটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিকে চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যকারীদের তালিকার ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা হবে বলে জানা গেছে।

প্রশ্ন থেকে যায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও ২০০২ সালে বিএনপি সরকারের সময়ে সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ কি একই ধরনের অভিযান? সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে এই দুটি অভিযানের সাথে এর বেশ কিছু মিল এবং অমিল পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ বেশ কিছু নতুন বিষয়ও উঠে এসেছে।  

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও ‘অপারেশন ক্লিন হান্টের’ মধ্যে পার্থক্য

অপারেশন ডেভিল হান্ট ও অপারেশন ক্লিন হার্ট গঠনের ধরণ নিয়ে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। মূলত অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানের একটি জাতীয় কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আমলার পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়াজ আহমেদ খানও রয়েছেন। কিন্তু ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরপরই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তৎকালীন অনেক মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে মেয়র কিংবা বিএনপির অনেক নেতৃবৃন্দও এ বিষয়ে জানতো না। ফলে গঠনের দিক থেকে বেশ পার্থক্য দেখা যায়।

দ্বিতীয়ত, অপারেশন ডেভিল হান্টে সেনাবাহিনী,বিজিবি,পুলিশ সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা একযোগে অভিযানে অংশ নেবে। ফলে এটি যৌথ বাহিনীর অভিযান হিসেবেই যাত্রা শুরু করছে। ২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টটি শুরু হয়েছিল কেবলমাত্র সেনাবাহিনীর অভিযান দিয়ে। পরবর্তীতে পুলিশ ও বিডিআর বাহিনীর সদস্যদের সংযোজন করা হয়।

তৃতীয়ত, দুটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যকারীদের তালিকা ধরে সেখানে অভিযান চালানো হবে ‘অপারেশন ভেডিল হান্টে’। অন্যদিকে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ তাৎক্ষণিক হওয়ায় তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের তালিকা ধরে চালানো হয়েছিল। প্রথম দিনেই আটক করা হয়েছিল ১৪০০ জন।

চতুর্থত, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অনেকটা ঘোষণা দিয়ে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। গাজীপুরে এই অভিযান চলবে বলেও তারা জানায়। কিন্তু ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ ছিল পুরোপুলি উল্টো। ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর মধ্যরাত, কার্যত ১৭ অক্টোবর থেকে সারাদেশে একযোগে অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। মধ্যরাতে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে অভিযান শুরু হয়। সেনা অভিযান শুরু আগে পুলিশকে কিছুই জানানো সেনা সদস্যদের গাড়ি যখন রাস্তায় নামে তখনই সবাই বুঝতে পারে যে অভিযান শুরু হয়েছে।

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ও ‘অপারেশন ক্লিন হার্টের’ মধ্যে মিল

প্রথমত, এই দুটি অভিযানই চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যকারীদের বিরুদ্ধে। ২০০২ সালে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ তৎকালীন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদাবাজির পাশাপাশি চলমান নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। বর্তমানে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ও কোর কমিটির বৈঠকে চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে। মূলত ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু শীর্ষ সন্ত্রাসী সক্রিয় অবস্থায় থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণরে বাহিরে চলে গিয়েছে।

দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশি। ২০০২ সালে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’ অভিযানের প্রথম দিনে ১৪০০ জন আটককৃতদের অধিকাংশই ছিল বিএনপির নেতা-কর্মী। এরমধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলরও ছিল। বিএননি নেতা আমান উল্লাহ আমানের গাড়ি, চিফ হুইপের বাড়িও তল্লাশি হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতার বাসা তল্লাশি হয়। গ্রেপ্তার হন শেখ সেলিম। এদিকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। কোর কমিটির বৈঠকে চাঁদাবাজে অভিযুক্ত থাকলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাসায় তল্লাশি চালানো কথা বলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতা-কর্মীদের তালিকা ধরে তল্লাশির কথা উঠেছে।

২০০২ সালে অপারেশন ক্লিন হার্টে সেনাবাহিনী ৮৪ দিন অভিযান পরিচালনার পর তাদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়। যেদিন থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার শুরু হয়, তাদের আগের দিন ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি অধ্যাদেশ ২০০৩’ জারি করা হয়। অপারেশন ক্লিনহার্ট চলাকালে ১২ হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও ২০১২ সালে করা এক রিটে এই অভিযানের দায়মুক্তি অবৈধ বলে রায় দেয় হাইকোর্ট।

Link copied!