বিএনপিতে কেন হঠাৎ ভারত বিরোধী মনোভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম

বিএনপিতে কেন হঠাৎ ভারত বিরোধী মনোভাব

ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎ কেন ভারত বিরোধী মনোভাব দেখালেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী- সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে ভারত- এমন অভিযোগ উঠে এসেছে বিএনপির হাই-কমান্ড থেকে। এরই জের ধরে রুহুল কবির রিজভীর নিজের গায়ে থাকা ‘ভারতীয় চাদর’ রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা দেশের রাজনীতিতে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতাসীনরা একে ‘ভারত বিরোধিতা’ হিসেবে দেখছেন। কিন্তু ভারত বিরোধিতার নীতিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে বিএনপির হাই-কমান্ড। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে তারা জানায়, ক্ষমতার প্রতি, রাষ্ট্র-নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের কাছে এই ধরনের ইস্যু প্রধান হতে পারে না।

আরও পড়ুন: দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলবে: মির্জা ফখরুল

ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে বিএনপির অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। তবে আশা করা যাচ্ছে, সোমবার স্থায়ী কমিটির নীতিনির্ধারণী বৈঠকে এ বিষয়ে দলটির অবস্থান সুস্পষ্ট হবে। কিন্তু সেই অপেক্ষা না করেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘হাফিজ সাহেব কি বললেন, রিজভী কি বললেন, মঈন খান কি বললেন, আমির খসরু কি বললেন, তার চেয়েও আমরা এখানে গুরুত্ব দিয়ে জানতে চাইবো ফখরুল সাহেব কি বলেন?’

রোববার সচিবালয়ে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে দেশের সব অর্জন ধ্বংস করে দিতে চায় বিএনপি।’

এদিকে ভারতীয় পণ্য বয়কটের কারণ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘মানুষের ভেতরে যে ক্ষোভ আছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে একতরফাভাবে ভারতের সমর্থন, সেটারই মূলত বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী প্রতিবাদ করেছেন। সচেতন কর্মী হিসেবে, বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে রিজভী সাহেব প্রতিবাদ করতেই পারেন।’

প্রতীকী প্রতিবাদ নাকি অন্য কিছু
গত ২০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন শেষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিজের গায়ে থাকা ভারতীয় চাদর ছুড়ে ফেলে দেন। পরে সেই চাদর আগুনে পুড়িয়ে দেন দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ভারত বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকেন। পরে নিজের গায়ের চাদর ছুড়ে ফেলে দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে রিজভী দাবি করেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে তিনি ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ জানিয়েছেন।

এটা কি প্রতীকী প্রতিবাদ নাকি দলের ভিন্ন কৌশল? বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জবাব দেন, রিজভী ব্যক্তিগত আবেগ থেকে এমন আচরণ করেছেন নাকি দলের কারও নির্দেশে করেছেন- সেটা তারা জানেন না। তবে ভারতীয় চাদর পুড়িয়ে ফেলা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মনে দানা বেঁধেছে নানান প্রশ্ন। অনেকেই এর সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।

বিএনপির অবস্থান নিয়ে সন্দিহান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারাও
ভারতীয় পণ্য বর্জনের নামে নিজের গায়ের চাদর রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি বিএনপির অন্যতম মিত্র গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের কাছেও স্পষ্ট নয়। রিজভী ও বিএনপির অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়েছিল ভারত। এই নিয়ে বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনের অন্য দল ও জোটগুলোতেও ভারতের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ভারতে মূল প্রতিপক্ষ বানিয়েছে। এটা কতখানি পরিপক্ব রাজনৈতিক অবস্থান হবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’

ভারতীয় পণ্য বয়কটের নামে আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ভারতকে মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে নেওয়া পরিপক্বতার পরিচায়ক নয়। এমন মানসিকতা দেশের জন্য অমঙ্গল বৈ মঙ্গল বয়ে আনবে না বলে অভিমত দিয়েছেন খোদ বিএনপির মিত্র জোটের নেতারা।

দলের অবস্থান নিয়ে রহস্য
ভারত বিরোধিতা নিয়ে বিএনপির অবস্থান কি সেটা নিয়ে বেশ জোরেশোরেই আলোচনা উঠেছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা এখনও মুখ খোলেনি।

ভারতীয় পণ্য বয়কট নিয়ে বিএনপি নেতারা এখনও মুখ না খুললেও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সোমবার নীতিনির্ধারণী বৈঠকে দলের অবস্থান জানানো হবে।’

বিএনপির ভারত বিরোধিতা নিয়ে কেন এত আলোচনা?
প্রায় এক দশক আগে প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসার চেষ্টা করছিলেন বিএনপি নেতারা। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনে ভোট বর্জন করেছিল দলটি। সেই নির্বাচনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করে বিএনপি। একইভাবে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পুরনো জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। ভারত বিষয়ে সতর্কভাবে বক্তব্যও দিতে থাকেন দলটির নেতারা।

গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনেও বিএনপি নেতারা ভারত প্রশ্নে সতর্ক ছিলেন। তাদের আশা ছিল, ভারত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে না গিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে।

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন, শুধু ভারতের সহায়তায় আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করতে পেরেছে। নির্বাচনের আগে থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের জোর তৎপরতা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন হয়েছে আওয়ামী লীগ।

অনেকে বলছেন ভিন্ন কৌশল
ভারতীয় পণ্য বয়কটের রিজভীর সংহতি প্রসঙ্গে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, এটা দলের অবস্থান কিনা সেটা তাদের জানা নেই। ভারতীয় পণ্য বয়কটে সংহতি জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী নিজের গায়ের চাদর ছুড়ে ফেলে দিলেন কেন সেটা স্পষ্ট নয়। তবে এর মধ্য দিয়ে দলের ভিন্ন কৌশল থাকতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

Link copied!