জুন ২৯, ২০২৫, ০৬:৫৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
একজন উপদেষ্টা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্রমাগত ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার, ২৯ জুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ঘরে ঢুকে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল এ বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়, ‘আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে শ্লীলতাহানী ও নির্যাতন এক নির্মম কলঙ্কজনক ঘৃণ্য ঘটনা। এই বর্বরোচিত ঘটনা দেশের মানুষকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল এই কাপুরুষিত ন্যাক্কারজনক ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আমলের মতো নিজেরাই সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি দখল ও নির্যাতন করে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। ঐ এলাকার একজন উপদেষ্টা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মুরাদনগরে ক্রমাগত ক্ষমতার অপব্যবহার করে যাচ্ছেন। দুষ্কৃতিকারীরা আশকারা পেয়ে সমাজবিরোধী নানা অপকর্মে মেতে উঠেছে। আর এ ক্ষেত্রে তারা দেশ-বিদেশ থেকে অবিরাম মদত পাচ্ছে। উপদেষ্টা যদি জনসেবার চেয়ে আত্মসেবাতেই ব্যস্ত থাকেন তাহলে এলাকায় শান্তি বিঘ্নিত হবে। মুরাদনগরের বাসিন্দা উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী এমপিদের মতো এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত রয়েছেন।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। পরে ওই নারীর মামলার প্রেক্ষিতে প্রধান আসামি ফজর আলীকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ভুক্তভোগীর ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার জন্য স্থানীয় মাফিয়াদের দোষারোপ করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন ‘মুরাদনগরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ছেড়ে দিয়েছেন। আজকের পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী।’
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীর শ্লীলতাহানী ও সহিংসতা মনুষ্যত্বহীন, অমানবিক, পাশবিক ও মহল বিশেষের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের অভিসন্ধি। আবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার আওয়ামী নোংরা কৌশলেরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে। হাসিনার পতনের পরেও আমাদের চিরচেনা সেই সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে না এনে বরং বিনষ্ট করা হচ্ছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এদিকে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা অর্থবিত্তে সজ্জিত। নারী নির্যাতনসহ সহিংস সন্ত্রাসের গোপন অভিযান চালিয়ে উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বিএনপির ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার জন্য তারা বিপজ্জনক গোপন অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। শক্তিশালী পক্ষের আশীর্বাদ আছে বলেই দুর্বৃত্তরা সহিংস কার্যাবলী চালাতে উৎসাহিত হচ্ছে। তবে সত্যের জন্য, সম্মানের জন্য ও আত্মমর্যাদার জন্য ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলকে দুষ্কৃতকারী পাষণ্ডদের প্রতিহত করতে হবে সুস্থ সমাজ ও নিরাপদ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।’
নারী নির্যাতনকারী অপরাধীদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে না মন্তব্য করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তারা মানব সভ্যতার শত্রু, আমি অবিলম্বে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনকারী দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানাচ্ছি।’