রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ: হঠাৎ থেমে যাওয়া এক রুদ্র ঝড়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ২১, ২০২২, ০১:১৯ পিএম

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ: হঠাৎ থেমে যাওয়া এক রুদ্র ঝড়

রুদ্রকে আমরা চিনি প্রেমের কবি হিসেবে। চিনি তার গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ কিংবা তার অন্যান্য কবিতা যা বাংলার তরুণ-তরুণীদের প্রেমে রসদ যোগায় তা দিয়ে। অথচ রুদ্র নিজেই অস্বীকার করেছেন কেবল প্রেমের কবিতা বলে কিছু হয়না। যেমন হয়না কেবল রাজনীতির কবিতা। কবিতা একটা সামগ্রিক বিষয়। যাতে রাজনীতি, প্রেম, দ্রোহ একে অপরের সঙ্গে মিশে থাকে জাড়াজড়ি করে। রুদ্রের কবিতার প্রকৃতি তার নামের মতোই। ভীষণ রুদ্র। তাই রুদ্রের কবিতায় শব্দের সম্মিলনে বিদ্রোহ যেন ঠিকরে পড়ে।

রুদ্রের কবিতার এমন রুদ্রমূর্তি প্রসঙ্গে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছিলেন, ‘রুদ্রের এমন অনেক কবিতা আছে যাদের পড়লে মনে হয়, ভেতরে কোথাও যেন সশব্দে দ্রোহে ফেটে পড়ছে, ক্রোধে কাঁপছে কোন মানুষ, গর্জন করছে কোন যুবক কিংবা উদাত্ত কণ্ঠে গান ধরেছে কেউ। মাঝে মাঝে তার কবিতার ভেতরে কান পাতলে কান্না শুনি,শোকের মাতম শুনি। কিন্তু পরাজিত হতে দেয় না সে…আমাদের’। রুদ্রের কবিতার শরীরের দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে উঠে রুদ্র আসলে কতোটা রুদ্র। শব্দের ঝঙ্কার যেন প্রাণের বীণা টঙ্কার তোলে। জীবনকে নতুন করে দেখার এক নতুন প্রকল্প হাজির হয় রুদ্রের পাঠকের সামনে।

১৬ বছরের রুদ্র।

সময়টা ১৯৭৮ এর মাঝামাঝি। ময়মনসিংহ মেডিকেলে পড়ুয়া এক কিশোরী-হ্যাঁ কিশোরীই বলা যায়। ১৭ বছর বয়সী এক নারীকে তরুণী বলা চলে না, যুবতী তো নাই-ই- নতুন নতুন সাহিত্য অঙ্গনে পা রাখি রাখি করছে। নাম লিমা নাসরিন। হঠাৎ একদিন কবিতা পাঠের সুবাদে তাঁর পরিচয় হলো এক কবির সঙ্গে। সেই কবি আর কেউ নন, রুদ্র; রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

পরে রুদ্রর বন্ধু আলমগীর রেজা লিমা নাসরিনেকে রুদ্রর ঠিকানা দিয়েছিলেন। সেই ঠিকানায় চিঠি চালাচালি চলতো। চিঠি চালাচালির এক পর্যায়েে এক অমল তরুণী এবং এক বিদ্রোহী যুবকের অন্তরে যা ঘটতে পারে  তাই ঘটেছে। প্রেম জমে উঠে তাদের মধ্যে। দেড় বছর প্রেম করার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিয়ে করার। সে মোতাবেক রুদ্র আর লিমা বিয়ে করেন ১৯৮১ সালের জানুয়ারি মাসে।

রুদ্র যেমন তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বদলে নামের আগে রুদ্র যোগ করে এবং বাকী নামের বানান সংশোধন করে রেখেছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। তেমনি তাঁর এককালের প্রেমিকা ও স্ত্রী লিমা নাসরিনও তাঁর নাম বদলে নিয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনে। তাসলিমা ও রুদ্র বিয়ের আড়াই বছর পর সংসার শুরু করেছিলেন। তারপর মাত্র দুই বছর সংসার করার পর তাদের বিচ্ছেদ হয়।

দুজনেই বিয়ে করেছিলেন বাবা মায়ের অমতে। দুজনেই ঘর ছেড়েছিলেন প্রেমের টানে। বাবার সঙ্গে রুদ্রর সম্পর্ক কোনদিনও ভালো ছিল না। তাঁর প্রমাণ পাওয়া যায় বিয়ের পর বাবার কাছে লেখা এক চিঠিতে। সেখানে রুদ্র উল্লেখ করেছেন, তাঁর বাবা কি শৈশব, কি কৈশোর, কখনোই রুদ্রকে সস্নেহে বুকে টেনে নেননি। বরং, রুদ্রের ইচ্ছা ছিল খেলোয়াড় হওয়ার। কিন্তু বাবার ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে হয়েছে। তারপর সময় যতো গড়িয়েছে রুদ্র নিজেকে আলাদা করে নিয়েছেন সবার থেকে।

তসলিমাকে চুমু দিচ্ছেন রুদ্র। ছবিটি তসলিমা নিজেই প্রকাশ করেছিলেন।

রুদ্রর প্রথম কাব্যগ্রন্থ বের হয় ১৯৭৯ সালে। নাম ছিল ‘উপদ্রুত উপকূল’। বুক সোসাইটির পক্ষ থেকে বইটির প্রকাশক ছিলেন সেই সময়ের আরেক চিন্তানায়ক আহমদ ছফা। সেই কাব্যগ্রন্থের জন্য পরের বছরই মুনীর চৌধুরী স্বর্ণপদক পান রুদ্র। পুরস্কারের ন্যায্য দাবীদার ছিল রুদ্রর সেই কাব্যগ্রন্থ। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’ কিংবা ‘ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা’-প্রবল আলোড়ন তুলেছিল। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর এই দৃপ্ত-দ্রোহী উচ্চারণ রুদ্রকে নতুন করে চেনায়নি বরং রুদ্র রুদ্র হয়ে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেছে মাত্র। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতেন। একবার তো ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতাও করেছিলেন। তার বিপরীতে ছিলেন তারই বন্ধু অধ্যাপক আলী রিয়াজ এবং কামাল চৌধুরী। কামাল এবং রুদ্র হেরে গিয়েছিলেন। আলী রিয়াজ জিতেছিলেন। তবে এই জয় পরাজয় তাদের সম্পর্কে কোন ছেদ ঘটায়নি।

রুদ্র নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন শব্দ শ্রমিক হিসেবে। বলেছিলেন, ‘আমি কবি নই- শব্দ শ্রমিক/শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়’। রুদ্রর বোধ এবং চেতনা ভুল ‍ছিল না। হয়তো তৎকালীন সময়ের, চেতনার বিরুদ্ধে নিজের স্বর ঘোষণা করতে গিয়ে রুদ্র নিজের চেতনা এবং বোধকে ভুল বলেছিলেন অভিমানে। অন্যদের থেকে আলাদা বলে। সময়ের থেকে এগিয়ে গিয়ে নিজের চিন্তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো রুদ্রের এই অভিমানী কিংবা সাহসী উচ্চারণ।

বন্ধুদের আড্ডায় রুদ্র। 

স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে তাঁর উচ্চারণ ছিল দৃঢ়। তাঁর সকল কাব্যগ্রন্থে সেই দৃপ্ত আওয়াজ বারবার উচ্চারিত হয়েছে। স্বল্পায়ু জীবনের বেশিরভাগ সময় রুদ্র কবিতার দিকে মনোনিবেশ করলেও কেবল কাব্যগ্রন্থে সীমাবদ্ধ থাকতে চাননি। গানও লিখেছিলেন শেষ দিকে। তাঁর গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো/আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’-গান বাংলা গান এবং সিনেমা জগতে বহুল পরিচিত। রুদ্র ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি নাট্যকাব্য লিখেছিলেন। যদিও জীবদ্দশায় প্রকাশ করে যেতে পারেননি। এছাড়াও ‘খুঁটিনাটি খুনসুটি’ শিরোনামে লিখেছিলেন ১৮ কবিতা। ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ৩২ টি কবিতা নিয়ে বই আকারে প্রকাশ করবেন। কিন্তু সেটা আর করা হয়ে উঠেনি।  তার আগেই একদিন মুখ থুবড়ে পড়েন। আর উঠা হয়নি তাঁর।

মারা যাওয়ার আগে, পেপটিক আলসারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তারপর সেরে বাসায়ও ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই ফেরাটা তার ফেরা ছিল না। বরং চলে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি ছিল মাত্র।

রুদ্রের টাকার অভাব ছিল না। ছিল না অন্য কোন কিছুর অভাব। যেটার অভাব তিনি বোধ করতেন, তা হলো ভালোবাসা। হয়তো ভালোবাসার অভাব তাকে জীবনের প্রতি উদাসীন বানিয়েছে। সেই উদাসীনতার কারণেই জীবেনে ব্যাপক অনিয়ম ছিল তাঁর। প্রচুর মদ্যপান করতেন। সিগারেট খেতেন চেইন স্মোকার হিসেবে।

একবার তাঁর পায়ে কোন একটা গুরুতর রোগ দেখা দেয়। তখন ডাক্তার তাকে সিগারেট ছাড়তে বলেছিলেন। কিন্তু জীবন নয় সিগারেট বেছে নিয়েছিলেন রুদ্র। পরে এই অসুস্থতা তাঁকে দীর্ঘদিন ভুগিয়েছে। আনিসুল হক লিখেছিলেন, ‘একবার তিনি এবং রুদ্র  ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন কবিতা পাঠের একটি আসরে। ট্রেনে গিয়ে নামলেন ময়মনসিংহ। রেল স্টেশনে একটু দূরে হেটে গিয়ে রিকশায় উঠবেন তারা। হাটার সময় আনিসুল হক দেখলেন বারবার রুদ্র পিছিয়ে পড়ছেন। আনিসুল হক এগিয়ে গিয়ে থামেন আর পেছন ফিরে দেখেন, রুদ্র দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছেন এবং একটা পা টেনে টেনে হাটছেন’। সেই টেনে টেনে হাঁটাটা চলেছে আমৃত্যু তবুও সিগারেট ছাড়েননি। অসুস্থতা ছিল কিন্তু সেটাকে পাত্তা দিতে চাননি। ফলে পেপটিক আলসার বাঁধিয়ে বসেছিলেন অল্প বয়সেই। 

দ্রোহী ও প্রেমিক রুদ্র। 

কেবল সিগারেট নয়, তাঁর প্রিয় জিনিসের তালিকায় ছিল মদ, চিংড়ি এবং চুমু। একটা নিদারুণ চুমুর অভাব রুদ্রর আজীবন ছিল। তাই হয়তো কৈশোরে বাড়ি এবং বাবা-মার স্নেহাশীষ বঞ্চিত রুদ্রর জীবনে যখন তসলিমা আসেন তখন রুদ্রর উচ্ছ্বাস ছিল অপরিমিত। তসলিমাকে ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন। কিন্তু সেই ঘরে আর থাকা হয়ে উঠেনি তাদের। দুজনের টানাপোড়েন যখন চরমে তখন একটা সময়ের জন্য ভেবেছিলেন যে, হয়তো একটা সন্তান হলে অনেক কিছু ঠিক হয়ে যাবে। চেষ্টাও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। কার ত্রুটি ছিল সেটাও আর ডাক্তারী পরীক্ষা করে জানা হয়নি তাদের। তসলিমার চলে যাওয়ার পর রুদ্র কি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন?

খানিকটা তো বেপরোয়া হয়েছিলেনই। কবির বন্ধু ইসহাক খান লিখেছেন, ‘রুদ্র কখনোই তাঁর সাবেক স্ত্রী সম্পর্কে কোন আক্ষেপ, বেদনা বা  অভিযোগ করতো না। একান্তে যখন দুজন বসতাম তখন কিছু ‍কিছু ঘটনা সে আমাকে বলতো। …তাতেই বুঝেছি কি ভয়াবহ বেদনা কষ্টের পাহাড় ওর বুকে অহর্নিশি জমাট বেঁধে থেকেছে’

তসলিমার বিরহ তাঁকে কাঁদাতো, এটা নিশ্চিত। তসলিমার পর স্বল্প সময়ের জন্য রুদ্রের জীবনে আরেকজন এসেছিল। তাঁর সঙ্গেও রুদ্রর ঘর বাঁধা হয়নি। সেই মেয়েটির সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল সে তাঁর বাবা মাকে জানিয়ে বাড়ি থেকে এসে রুদ্রকে বিয়ে করবে। মেয়েটি বাড়ি গিয়েছিল, ফিরেও এসেছিল। কিন্তু ফিরে এলেও রুদ্রের সঙ্গে আর তাকে দেখা যায়নি কখনো। অথচ এই মেয়েটির জন্য রুদ্রর জীবনে ব্যপক পরিবর্তন িএসেছিল। নিজের এবং ঘরের শ্রী ফেরানোর প্রতি মনযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে আর আসেনি। এটাও হয়তো রুদ্রর জীবনে আরেকটি বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হয়ে এসেছিল। 

তসলিমাকে লেখা রুদ্রের চিঠি। 

৩৪ বছরের জীবনে রুদ্র কেমন ছিলেন? সেটা নিয়ে রুদ্র নিজেই বলেছেন তার পছন্দের তালিকায় আছে মদ, চিংড়ি এবং চুমু। হয়তো একটি চুমুর হাহাকার তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনে শরীর বা স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীনতা ছিল চিরকালীন। তবে ঘরের ‍রুদ্র ভীষণ গোছালো।

রুদ্রর জীবন সংস্থানের জন্য টাকা আসতো নান উপায়ে। ঢাকায় তার বেশ কয়েকটি রিকশা ছিল। যেগুলো ভাড়ায় খাটতো। এলাকায় ছিল চিংড়ি ঘের। সেখান থেতেও আসতো বেশ বড় অংকের টাকা। ফলে টাকার অভাব কোনদিন তার হয়নি। কিন্তু তার জীবনে অভাব ছিল ভালোবাসার। জীবনের শেষ বেলায় রুদ্র যখন অসুস্থ থাকতেন তখন কেউই তাকে কাছে টানেনি। তবে সেসময় কবি অসীম সাহা তার নীলক্ষেতের বাবুপুরার ছাপাখানায় রুদ্রের জন্য একটি চেয়ার সবসময় আলাদা করে রাখতেন। 

জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে তসলিমা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রুদ্রর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তসলিমা হঠাৎ করে ভীষণ পুরুষ বিদ্বেষী হয়ে উঠেন। রুদ্রকে নিয়ে এবং পুরুষ সমাজকে নিয়ে নানা বিদ্বেষপূর্ণ লেখা লিখতে থাকেনে। এটা রুদ্রর কাছে মনে হয়েছে তসলিমার মেধার অপচয়। তাই রুদ্র একটি পত্রিকায় তসলিমাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, এমন উদ্দেশ্যহীন কাজ না করে ভালো কিছু লিখতে। রুদ্রর বিশ্বাস ছিল তসলিমার ভালো কিছু করার শক্তি রয়েছে।

নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি। 

আজীবন অন্যের মঙ্গল কামনা করা মানুষ নিজের মঙ্গল কামনার অবসর পাননি। তাই হয়তো চলে গিয়েছেন নিজের জীবন অন্যকে দিয়ে। কিংবা রুদ্রর হয়তো তার সমকালীন লেখক-বন্ধু আহমদ ছফার ‘নিহত নক্ষত্র’ গল্পটা পড়া ছিল। হয়তো বিপ্লবী মুনতাসীরের চরিত্রটি বেশ পছন্দ ছিল তার। আসলে রুদ্র তো এমনই রুদ্র। তার তো থেমে থাকার সময় নেই। সময়ের চেয়ে এগিয়ে থেকে একদিন রুদ্র ঝরে পড়লেন আকাশ থেকে। নক্ষত্রের পতন হলো।

সময়টা ১৯৯১ সালের ২১ জুন। অল্প কিছুদিন আগে রুদ্র সুস্থ্য হয়ে ফিরে এসেছেন হাসপাতাল থেকে। সেদিন ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত ব্রাশ করছিলেন। হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়ে গেলেন বেসিনের উপর। সব শেষ হলো। থেমে গেল এক নিপুণ রুদ্র ঝড়। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে।

মাকে নিজ হাতে চিঠি লিখতেন রুদ্র।

নিপুণ এই অর্থে যে, রুদ্র কবিতায় জীবনের যে প্রতিচ্ছবি এঁকেছেন তা নিপুণ। জনজীবনের ছবি আঁকতেন বলে অনেকে রুদ্রকে ‘জসীমিয়ান‘ বলে ব্যাঙ্গ করতেন। কিন্তু পাঠক জানে, বোদ্ধারাও জানে শব্দ শ্রমিক রুদ্র শব্দের কারিকুরিতে যা করতেন তাতে জীবন ঝরে পড়ত।  এবং তা প্রবল বেগে ঝড়ের মতো আঘাত করতো মানুষের মননে। 

কবি দুই প্রকার।

এক. কবিতার সেই পাঠক যারা কবিতাকে পড়তে যানে। তারা যখন কবিতা লিখে তখন তা হয়তো মুদ্রণযোগ্য হিসেবে উৎরে যায়।

দুই. কবি। শব্দের গাথুনি দেখেই বলা যায় এ কবিই, অন্য কিছু নয়।

রুদ্রও তাই। জীবনে কবিতা লেখা বাদে আর কিছু করেননি। চাকরি তো দূরের কথা আবেদনও করেননি কোনদিন। ব্যবসা, কন্ট্রাকটারিসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কিছু করেছেন চাকরি নয়। রুদ্র কেবল কবি হতেই এসেছিলেন। তারপর কবি হওয়া শেষে একগাদা অভিমান নিয়ে চলে গেছেন।

চলে যাওয়ার আগে আমাদের শিখিয়ে গেছেন,

‘চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়

চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী

চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে

আমার না-থাকা জুড়ে’।

 রুদ্র চলে গিয়েও থেকে গেছেন আমাদের মাঝে।

Link copied!