বিপ্লবী ও গণমানুষের এক নেতা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ৫, ২০২১, ১২:২৫ পিএম

বিপ্লবী ও গণমানুষের এক নেতা

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন যখন পুরো বিশ্বকে চোখ রাঙিয়েছে তখন কিউবা, ইরান, লিবিয়া কিংবা ভেনিজুয়েলার মতো আগ্রাসনবিরোধী দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বরাবরই বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়েছে। স্বদেশের অর্থনীতিকে গড়ে তুলেছে স্বয়ং-সম্পূর্ণরূপে। আর নিজ দেশকে এমন প্রতিবাদী ও বিপ্লবী অবস্থানে যারা নিয়ে গেছেন তারা চিরভাস্বর হয়ে থাকেন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, যুদ্ধ ও লুটপাটতন্ত্রবিরোধী বিপ্লবীদের হৃদয়ে। ভেনিজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ সে চিরভাস্বর বিপ্লবীদের একজন। ল্যাটিন আমেরিকার জুনিয়র ফিদেল কাস্ত্রো বলা হতো তাকে।

শ্যাভেজ যে কত মহান নেতা ছিলেন নিজেই তা বুঝতে পারেননি: ফিদেল

৫ মার্চ ২০১৩ সালে ৫৮ বছর বয়সে ভেনিজুয়েলার ‘ক্যারিসমেটিক’ নেতা হুগো শ্যাভেজ মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ১৪ বছর ভেনিজুয়েলার নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন তিনি। শ্যাভেজের মৃত্যুতে সমাজতন্ত্রের আরেক বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো শোকবাণীতে বলেছিলেন, ‘শ্যাভেজ যে কত মহান নেতা ছিলেন নিজে তা বুঝতে পারেননি’। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং শোকবাণীতে বলেন, ‘শ্যাভেজ ছিলেন ক্যারিসমেটিক এবং অসম্ভব জনপ্রিয় এক নেতা, তিনি তার পেছনে সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামের এক দীর্ঘ ঐতিহ্য রেখে গেছেন।’

হুগো শ্যাভেজকে টানা চারবার রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ দেশেই কয়েক বছরের ব্যবধানে রাষ্ট্রপ্রধানদের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে। কিন্তু হুগো শ্যাভেজ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমই বটে। একারণেই প্রশ্ন জাগে, কোন জাদুবলে আমৃত্যু নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিলেন শ্যাভেজ? কী সেই ক্ষমতা যার ফলে তার মৃত্যুর অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও দেশটির জনগণ আজও একজন হুগো শ্যাভেজকেই খুজে? প্রশ্নগুলোর সবচেয়ে সহজ উত্তর হতে পারে একটাই। হুগো শ্যাভেজ ছিলেন গণমানুষের নেতা। আক্ষরিক অর্থেই তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সুবিধা আদায়ে আমত্যু চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

পুঁজিবাদ, যুক্তরাষ্ট্র ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে আমৃত্যু লড়াই করে যাওয়া গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত বিশ্বের বামপন্থী নেতাদের একজন হুগো শ্যাভেজ। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার মর্যাদা পাওয়া ভেনেজুয়েলার সাবেক এ রাষ্ট্রপতির জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৮ জুলাই। শিশুকাল কাটিয়েছেন দারিদ্র্যের মধ্যে। ১৬ বছর বয়সে ভর্তি হন ভেনেজুয়েলার সামরিক একাডেমিতে। পাঁচ বছর পর যোগ দেন সেনাবাহিনীতে। ঘটনাবহুল শ্যাভেজের জীবনের উত্থানপর্বের শুরু মূলত এর পর থেকেই।

ভেনেজুয়েলার বামপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে গঠন করেন ভেনেজুয়েলান পিপলস লিবারেশন আর্মি। ১৯৯২ সালে সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হন। দুই বছরের জন্য কারাগারে যেতে হয় ভেনেজুয়েলার সর্বকালের জনপ্রিয় এ নেতাকে। কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে নিজেকে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করেন রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে। দলের নাম দেন ফিফথ রিপাবলিক মুভমেন্ট।

সমাজতন্ত্রের স্বপ্নে লালিত শ্যাভেজ ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথমবারের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন হুগো শ্যাভেজ। একই বছর ভেনেজুয়েলার নতুন সংবিধান প্রণয়ন করেন তিনি। এ সংবিধানের আলোকেই ২০০০ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত হন তিনি।

২০০২ সালে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার জন্য ক্ষমতা ছাড়তে হয় তাকে। ২০০৬ ও ২০১২ সালের নির্বাচনে তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় ক্ষমতায় আসেন হুগো শ্যাভেজ। তার শাসনামলে ব্যাপক উন্নতি হয় দেশটির। দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার মান উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে উন্নতির ছোঁয়া লাগে। বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলে আলোচিত হয়েছেন শ্যাভেজ। ২০১১ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। আজীবন দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাওয়া এ নেতা ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ক্যান্সারের কাছে হার মেনে মৃত্যুবরণ করেন।

Link copied!