ডিসেম্বর ২২, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
আমাদের সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য একটা সধারণ ঘটনা। এই বৈষম্যের ফলে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পুরূষের চেয়ে নারীরা সবসময় পিছিয়ে থাকে।
লিঙ্গ বৈষম্য একটা দুষ্টচক্রের মতো ব্যাপার। একদিকে এই বৈষম্য যেমন নারীদের পেছনে ঠেলে দেয়, তেমনি পিছিয়ে পড়ার ফলে নারীরা নানাভাবে অবদমনের শিকার হয় এবং তার স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে নারীদের মস্তিস্কের পুরুত্বও কমে যায়।
এমনটি দাবি করেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে নারীর মস্তিষ্কের গঠনে পার্থক্য তৈরি হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বৈষম্যের কারণে নারীরা মানসিকভাবে চাপ ও পীড়নের মধ্যে থাকে। ফলে তাদের মস্তিষ্কের পুরুত্ব কমে যায়। বিষয়টিকে ‘সমাজের জন্য বড় সতর্কবার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব দেশে লিঙ্গ বৈষম্য বেশি, সেসব দেশে পুরুষ ও নারীর মধ্যে মস্তিষ্কের কর্টেক্সের পুরুত্বের পার্থক্য বেশি। আর যেসব দেশে লিঙ্গ বৈষম্য কম, সেসব দেশে মস্তিষ্কের কর্টেক্সের পুরুত্বে কোনো পার্থক্য পাওয়া যায় না।
মানুষের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশটি হল সেরিব্রাম। সেরিব্রামকে আবৃত করে থাকে সেরিব্রাল কর্টেক্স। গবেষকরা সেরিব্রাল কর্টেক্সের ৬৮টি অঞ্চল পরীক্ষা করেছেন। দেখা যায়, সেরিব্রাল কর্টেক্সের যেসব অঞ্চল মানসিক আবেগ-অনুভূতির, চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত, নারীর মস্তিষ্কের সেসব অঞ্চল পাতলা হয়ে যায়। এর ফলে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। বিষণ্নতা এবং পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের জন্যও এটি দায়ী। এর ফলে পড়ালেখা, নেতৃত্বদান প্রভৃতি ক্ষেত্রেও নারীরা পিছিয়ে পরে।
গবেষকরা ২৯টি দেশের ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৪,০৭৮ নারী এবং ৩,৭৯৮ জন পুরুষের ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) স্ক্যান বিশ্লেষণ করে গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
জাতিসংঘের জেন্ডার ইনইক্যুয়ালিটি ইনডেক্স এবং ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স অনুসারে লিঙ্গসমতার দিক দিয়ে সবেচেয়ে এগিয়ে আছে স্ক্যান্ডেনেভীয় দেশগুলো। গবেষণায় দেখা যায় যে, এসব দেশের নারীপুরুষের মস্তিষ্কের কর্টেক্সের পুরুত্বে তেমন কোন পার্থক্য নেই। লিঙ্গসমতার দিক দিয়ে এসব দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকায় জাপানের নারীদের মস্তিষ্কের কর্টেক্সের পুরুত্বে পার্থক্য দেখা যায়। গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ২৯টি দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১২তম।
প্রধান গবেষক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের ভিজিটিং অধ্যাপক এবং চিলির পন্টিফিসিয়া ইউনিভার্সিদাদ কাতোলিকার সহযোগী অধ্যাপক ড. নিকোলাস ক্রসলি বলেন, গবেষণা প্রমাণ করে যে, নারীর মস্তিষ্কের গঠনে পার্থক্য তৈরি হওয়ার পেছনে লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে তৈরি হওয়া প্রতিকূল সামাজিক পরিবেশের দায় আছে, যে প্রতিকূল পরিবেশে বেশিরভাগ নারীকে বসবাস করতে হয়।
অন্যতম গবেষণা-সহযোগী কিয়োটো ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুকাসা উয়েনো বলেন, “নারীর মস্তিষ্কের গঠনে লিঙ্গ বৈষম্য কী ধরনের সংকট তৈরি করে এবং কোন ক্ষেত্রে তা প্রভাব ফেলে, সেটি সঠিকভাবে নির্ধারণ করার জন্য ধারাবাহিক গবেষণা জরুরি।”
বারোজন গবেষক যৌথভাবে জার্নাল প্রোসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ পেপারটি প্রকাশ করে।