চলে গেলেন ভূপিন্দর সিং, ভারতের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ১৯, ২০২২, ১২:১৩ পিএম

চলে গেলেন ভূপিন্দর সিং, ভারতের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছায়া

ভারতের প্রখ্যাত গজলশিল্পী ভূপিন্দর সিং আর নেই। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের জুহুর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বেশ কয়েকদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন ভূপিন্দর সিং। এসময় তার  করোনাভাইরাসের সংক্রমণও ঘটেছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

তাঁর স্ত্রী মিতালি সিংয়ের বরাত দিয়ে  আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।

আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স আশি পেরিয়ে গিয়েছিলেন ভূপিন্দর সিংহের। শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন খ্যাতনামা এই গজলশিল্পী। অসুস্থতা এতটাই বেড়েছিল যে, দিন দশক আগে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় তাঁকে। চিকিৎসকদের অনুমান, কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভূপিন্দর সিং। তার উপর আবার করোনা টেস্টেরও রিপোর্ট পজিটিভি এসেছিল। ফলে বয়োপসি আর করা যায়নি।

ভূপিন্দর সিং ১৯৪০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা অধ্যাপক নাথা সিংও একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। বাবার কাছে গানে তালিম নিতে শুরু করেছিলেন। এরপর অল ইন্ডিয়া রেডিও-তে পেশাদার সংগীতশিল্পী যোগ দেন ভূপিন্দর সিং। পরে দূরদর্শনের সঙ্গেও যুক্ত হন।১৯৮০ সালে ভূপিন্দর বাংলাদেশি শিল্পী ময়মনসিংহের মেয়ে মিতালি মুখার্জিকে বিয়ে করেন। ময়মনসিংহের মেয়ে মিতালী বরোদায় পড়তে গিয়ে ভূপিন্দরকে বিয়ে করে ভারতেই থিতু হয়ে যান।

মিতালী ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে বলেন, “নানা ধরনের শারীরিক জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিছু দিন ধরে মূত্রনালীতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল।”

এক সপ্তাহের বেশি সময় আগে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল ৮২ বছর বয়সী ভূপিন্দরকে। সেখানেই সোমবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। এসময় তার করোনাভাইরাস সংক্রমণও ঘটেছিল।

গজল ছাড়াও বলিউড চলচ্চিত্রেও নিয়মিত প্লে ব্যাক করতেন ভূপিন্দর। মাসুম, সত্তা পে সত্তা, আহিস্থা আহিস্থা, হকিকতসহ বিভিন্ন সিনেমায় তার গাওয়া গান বেশ জনপ্রিয় হয়। পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে মহম্মদ রফি, রাহুল দেব বর্মণ, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, বাপ্পী লাহিড়ির মতো সব মহারথীর সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি।

পুরোনো গজলে নতুন রূপ দিয়েছিলেন ভূপিন্দর সিং। আর তা সম্ভব হয়েছিল তার গিটারপ্রীতির কারণেই। ভূপিন্দর চলে গেছেন না ফেরার দেশে, রয়ে গেছে তার সৃষ্টি। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে—‘মেরা রং দে বসন্তি চোলা’, ‘আহিস্তা আহিস্তা’, ‘পেয়ার হামে কিস মোড় পে লে আয়া’, ‘সাত্তে পে সাত্তা’, ‘এক আকেলা ইস শহর মে’ ইত্যাদি।

ঢাকাই চলচ্চিত্রেও প্লেব্যাক করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ভূপিন্দর সিং। মিতালী-ভূপিন্দরের গাওয়া ‘যেটুকু সময় তুমি থাক পাশে’ গানটিও দুই বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। মিতালিও দুই পয়সার আলতা সিনেমায় ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’ গানটি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান তিনি।

ভূপিন্দর সিংয়ের মৃত্যুতে বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী পঙ্কজ উদাস আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেছেন, “ভূপিন্দরজি আমার বড় দাদা ছিলেন। ওর গায়ন রীতি, কণ্ঠস্বর সবার থেকে আলাদা। ফের সঙ্গীত দুনিয়া অভিভাবকহীন হল। ফের দেশ তার আরও এক কৃতী সন্তানকে হারাল।”

ভারতের  খ্যাতিমান গজল শিল্পী ভূপিন্দর সিংহের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, “'শ্রী ভূপিন্দর সিং জি-র প্রয়াণে গভীর ভাবে শোকাহত। বহু দশক ধরে উনি আমাদের স্মরণীয় সব গান উপহার দিয়েছেন। ওঁর সুরের জাদু বহু মানুষকে আবেগতাড়িত করেছিল। এই খারাপ সময়ে আমি মানসিকভাবে ওঁর পরিবারের এবং অনুরাগীদের পাশে আছি। ওম শান্তি।'

Link copied!