কানন দেবী, যিনি কিনা কানন বালা নামেও পরিচিত। ভারতীয় বাঙ্গালি অভিনেত্রী এবং গায়িকা কানন দেবী। ভারতীয় চলচ্চিত্রে নায়িকাদের মধ্যে প্রথম গায়িকা এবং বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম তারকা হিসেবে তিনি ছিলেন স্বীকৃত। আজ এই অভিনেত্রীর ১০৫ তম জন্মদিন। ১৯১৬ সালে ২২ এপ্রিল হাওড়া, বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেন তিনি। অভিনয়, গান এবং নাচের দিক থেকে দক্ষতা থাকায় পুরো কলকাতার পাশাপাশি পুরো ভারতে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি।
প্রায় ৭০-এর অধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কানন দেবী। এছাড়াও বিজ্ঞাপন চিত্রেও দেখা যায় তাকে। বহু প্রতিভার কানন দেবী অভিনয়ের পাশাপাশি নৃত্য এবং সঙ্গীতেও ছিলেন পারদর্শী। শিল্প মাধ্যমে অসাধারণ অবদানের জন্যে ভারত সরকার তাকে ১৯৬৪ সালে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন।
১৯২৬ সালে জয়তিশ বন্দোপাধ্যায়ের জয়দেবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে কানন দেবীর অভিনয়ের শুরু হলেও তার সত্যিকারের অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৩০ সালে।তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পরিচালকেরা অর্থিকভাবেও তাকে ঠকাতেন। ১৯৩৫ সালে মুক্তি পায় তার জয়তিশ বন্দোপাধ্যায়ের মানময়ী গার্লস স্কুল এবং এর মাধ্যমেই তিনি নিজেকে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এরপর ১৯৩৭ সালে মুক্তি চলচ্চিত্র তাকে সর্বপ্রথম অভিনেত্রী হিসেবে সফলতা এনে দেয়।
১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কানন দেবীর জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতির সময় ছিল।তিনি এ সময় সম্ভ্রান্ত কানন দেবীতে পরিণত হন কানন বালা থেকে।তিনি তখন রোমান্টিক নায়িকার বদলে স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকাতেই বেশি অভিনয় করেন।১৯৪৮ সালে তিনি শ্রীমতি পিকচার্স গড়ে তোলেন যার বেশির ভাগ ছবিই ছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে।এই কোম্পানীর ছবিতে তিনি কেবল অভিনয় ও প্রযোজনাই করেন নি, তিনি পরিচালনাও করেন।
কানন দেবী একজন ভাল গায়িকাও ছিলেন। তিনি ওস্তাদ আল্লারাখার কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের শিক্ষা নেন।এছাড়াও তিনি ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, রাইচাঁদ বড়াল, কাজী নজরুল ইসলাম,অনাদি দস্তিদার ও পঙ্কজ কুমার মল্লিকদের কাছেও তালিম নেন।তিনি আধুনিক গান ছাড়াও রবীন্দ্র সঙ্গীতও গেয়েছিলেন, যা রবীন্দ্রনাথকেও খুশি করে তুলেছিল।
কানন দেবী ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।চলচ্চিত্রে ইতিহাসবিদ রবি বসু লিখেছেন যে কানন বালাকে দেখে অনেক যুবক ও প্রৌঢ়ের হৃৎস্পন্দন বেড়ে যেত।তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ‘ঋষির প্রেম’, ‘প্রহলাদ’, ‘কংসবধ’, ‘বিষ্ণুমায়া’, ‘মা’, ‘মুক্তি’, ‘শেষ উত্তর’ ইত্যাদি। ২০১১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের ডাক বিভাগ কানন দেবীর একটি স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে।।