বাংলাদেশের ক্রিকেটটা খেলতে হবে ভালো উইকেট। ভালো উইকেট বলতে আমি বোঝাচ্ছি, যেখানে ব্যাটসম্যান-বোলার সবার জন্য সুবিধা থাকবে। আমি যতদূর দেখেছি, ওরা দেশের মাটিতে ‘টেইলর মেড’ উইকেটে খেলে। ওরা যখন মন্থর, টার্নিং উইকেটে খেলে সেখানে বোলাররা খুব ভালো করে। কিন্তু যখন ওরা দেশের বাইরে খেলে তখনই ঝামেলা হয়। বল সেখানে টার্ন করে না, ওরা উইকেট থেকে সহায়তা পায় না, সমস্যা হয়ে যায়।সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক আজহারউদ্দিন বাংলাদেশ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন।
টি টেন সংস্করণ চালু করতে হবে
টি-টেনের ভবিষ্যৎ ভালোই মনে হচ্ছে। তবে তার জন্য অনেক দেশের এই সংস্করণ চালু করতে হবে। যদি অন্য দেশগুলো এই সংস্করণকে গ্রহণ করে তাহলে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আবু ধাবিতে এটা কেবল পঞ্চম বছরের মতো হতে যাচ্ছে। একটি টুর্নামেন্ট কোথাও পাঁচ বছর চলার অর্থ, এটা ভালো হচ্ছে। এমন টুর্নামেন্ট চালানোর কাজটা সহজ নয়।
টেস্টই চূড়ান্ত খেলা
আমি সব সময়ই চাই, টেস্ট ক্রিকেট থাকুক। একজন ক্রিকেটের সত্যিকারের পরীক্ষা সেখানেই হয়। আমি বলছি না, অন্য ক্রিকেটের আবেদন কম। সেখানে স্কিল কম লাগে। তবে সব কিছুর চূড়ান্ত হলো টেস্ট ক্রিকেট। এখানেই একজন খেলোয়াড়ের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ পরীক্ষাটা দিতে হয়। টেস্ট যেহেতু পাঁচ দিনে খেলা হয়, উইকেট-কন্ডিশন প্রতি নিয়ত পাল্টাতে থাকে। সব যখন দ্রুত পাল্টাতে থাকে তখন ক্রিকেটারদের এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষাও দিতে হয়। সেদিক থেকে টেস্টই হলো ক্রিকেটের চূড়ান্ত। এখন তো টি-টোয়েন্টি, টি-টেনের মতো খেলাগুলো হচ্ছে। আমাদের এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশের উইকেটে পরিবর্তনের পরামর্শ
দেশের বাইরে উন্নতি করতে হলে, দেশের মাটিতে উইকেট ও কন্ডিশনে পরিবর্তন আনা দরকার। ভালো উইকেটে খেলার সামর্থ্য কিন্তু বাংলাদেশের আছে। তাদের খুব ভালো মানের কয়েকজন পেসার রয়েছে। তারা সীমিত সুযোগের মধ্যে তাদের সামর্থ্যও দেখিয়েছে। ওদের এমন কিছু উইকেট বানানো প্রয়োজন যেখানে পেসারদের জন্য সহায়তা থাকবে, সুইং, সিম মুভমেন্ট থাকবে। এমন উইকেটে খেললে শুধু বোলাররা না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্যও ভালো হবে। দেশের বাইরে খেলার এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।
একটি দুটি-ম্যাচ নিজেদের জন্য খুব সহায়ক নয় এমন উইকেটে খেলল। যদি দেশের মাটিতে এমন উইকেট বানিয়ে খেলে তাহলে সবচেয়ে ভালোভাবে শেখা যাবে। যেখানে অনেক সহায়তা নেই, তেমন উইকেটে খেললেও স্কিল বেশি বাড়বে। এটা শুধু বোলারদের জন্য নয়, ব্যাটসম্যানদের ব্যাপারেও খাটে। র্যাং টার্নার না করে, একটু স্পিন আছে, কিছুটা সুইং আছে এমন উইকেটে খেললে বেশি শিখবে। যদি টার্ন অনেক বেশি করে তাহলে যে কেউই ভালো করতে পারে। সত্যিকারের সামর্থ্যটা সেখানে বোঝা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
সকলের সাথেই ম্যাচ খেলতে হবে
ভাল করতে হলে শুধু ভারত নয় আসলে সবার সঙ্গেই খেলতে হবে। আর আমার যেটা মনে হয়, সব সময় বেশি ম্যাচ খেলাও জরুরি নয়। উন্নতি করতে চাইলে সেটা যে কোনো ভাবেই করা যায়। যখন ঘরোয়া ক্রিকেট হয়, সেটা হতে পারে ভালো উইকেটে। কেবল স্পিনারদের জন্য সহায়ক উইকেটে না খেলে সেখানে ব্যাটসম্যানদের জন্য সহায়ক উইকেট, পেস বোলারদের জন্য সহায়ক উইকেট রাখা যেতে পারে। আমি জানি, বাংলাদেশের ভালো স্পিনার আছে। তারা শক্তির জায়গা অনুযায়ী্ই খেলতে চায়। কিন্তু এখনকার ধারায় থাকলে ওরা কেবল দেশের মাটিতেই ভালো ক্রিকেট খেলবে। বাইরে গেলেই ভুগতে থাকবে। এটা মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়, বাংলাদেশের জন্য।
ভারত উইকেটে পরিবর্তন এনে উন্নতি করেছে
ভারত যে সব সময় র্যাঙ টার্নার বানাত তা কিন্তু নয়। অনেক রকম উইকেটেই খেলত। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট ছিল। কোথাও কোথায় পেসারদের জন্য সহায়ক উইকেটও ছিল। এতো ভিন্ন ধরনের উইকেটে খেললে যেটা হয়, একজন খেলোয়াড় যে কোনো কন্ডিশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের এখন যে স্পিনার আছে তাদের বেশিরভাগই তরুণ। ওরা ভালোও করছে। কিন্তু অনেক রকম কন্ডিশনে খেলার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। এখনই ওদের সময়, বিভিন্ন ধরনের উইকেটে খেলে ঋদ্ধ হওয়ার। নইলে হয়ত, বেশি দেরি হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে মানুষ ক্রিকেট পাগল
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ইন্ডিপেন্ডন্ট কাপে খেলেছিলাম। আমার যতদূর মনে পড়ে, বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম খেলি সেই ১৯৮৮ সালে। এশিয়া কাপে, সঙ্গে শ্রীলঙ্কাও ছিল। আমার যেটা সবচেয়ে ভালো মনে আছে, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট-পাগল। তারা দলকে পাগলের মতো সমর্থন করে। যেখানেই বাংলাদেশ খেলে, দেখেছি গ্যালারি দর্শকে পূর্ণ থাকে। দেশের বাইরেও এখন ওদের প্রচুর সমর্থক রয়েছে। ইংল্যান্ডে গত বিশ্বকাপে দেখেছি, প্রতিটি ম্যাচে বাংলাদেশের অনেক দর্শক ছিল গ্যালারিতে। দেশের বাইরে ১০-১৫ হাজার সমর্থক পাওয়া কিন্তু সহজ কথা নয়। ওদের কিন্তু একটাই চাওয়া, বাংলাদেশ ভালো খেলুক। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিন ভেন্যুতে বাংলাদেশের প্রচুর সমর্থক ছিল মাঠে।
চাপ না নেয়াই চাপ সামলানোর উপায়
চাপ সামলানোর সবচেয়ে ভালো উপায় চাপ না নেওয়া। দেশের জন্য খেলা, সমর্থকদের জন্য খেলা, এখানে আবার চাপ কি। চাপ মনে করলেই চাপ, না মনে করছে কিছুই না।