সেঞ্চুরিয়নে ইতিহাস লেখার হাতছানি বাংলাদেশের। চলমান সিরিজের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এর আগে খেলা ৯ ওয়ানডের সবকটিতে হার ছিল বাংলাদেশের। সে দেশে খেলা সব মিলিয়ে ১৪ ওয়ানডেতে জয় ছিল না টাইগারদের। এবার সে খরা কাটে সেঞ্চুরিয়ানে। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩৮ রানে দাপুটে জয়। এরপর জোহানসবার্গে দ্বিতীয় ওয়ানডে হারলেও তৃতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ানে ফিরে ইতিহাস লেখার দুয়ারে বাংলাদেশ দল।
সিরিজ ১-১ এ সমতায় থাকায় দুই দলের আজ বুধবারের লড়াইটা রূপ নিয়েছে অঘোষিত ফাইনালে। শিরোপার লক্ষ্যে আগে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের মাত্র ১৫৪ রানেই অলআউট করে দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়তে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৫৫ রান। বিধ্বংসী বোলিংয়ে পেসার তাসকিন আহমেদ একাই নিলেন ৫ উইকেট। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফাইফার।
অলআউট হওয়া ইনিংসে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন রানের সংগ্রহ দক্ষিণ আফ্রিকার। এর আগে ২০১৫ সালে মিরপুরে ১৬২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল প্রোটিয়ারা।অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের শুরুটা দেখেই লাল-সবুজের সমর্থকরা ঘাবড়ে যান। অনেকেই অঙ্ক কষতে বসেন, তিনশ তো ছাড়াচ্ছেই দলীয় সংগ্রহ, তবে থামবে কোথায়! কিন্তু অধিনায়ক তামিমের কথাটাই যেন ফলে গেল, সিরিজ শুরুর আগে টাইগার দলপতি একাধিকবার বলেছেন, শুরুর ১৫-১৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে উইকেটের চরিত্র বুঝা প্রয়োজন। এদিন ১৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়েই প্রোটিয়াদের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। একশ ছোঁয়ার আগে নেই ৫ উইকেট।
এই সেঞ্চুরিয়ানে অবশ্য ওপেনার কুইন্টন ডি ককের পরিসংখ্যান বেশ সমৃদ্ধ। তবে তাকে একপাশে রেখে টস জেতা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে আগ্রাসী ইয়ানেমান মালামের ব্যাট। ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারেই স্কোর বোর্ডে ৪০ রান। এই জুটি যখন ধীরে ধীরে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন দৃশ্যপটে মেহেদী হাসান মিরাজ। বিধ্বংসী হওয়ার আগে ফেরালেন ডি কককে।
মিরাজের আগের বল কাভার দিয়ে চার মারেন ডি কক। পরের বলটা তিনি ওড়াতে চেয়েছিলেন লং অফের ওপর দিয়ে। কিন্তু টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন। লং অফে সহজ ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচে ঝড় তুলে ফিফটি করা ডি কক এবার ৮ বলে ২ চারে করেন ১২ রান। ওই উইকেটেই মোমেন্টাম পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল।
যদিও পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে ওই ১ উইকেটই। টেম্বা বাভুমার দল তুলে ফেলে ৫৭ রান। মালানের সঙ্গে কাইল ভেরেইনার দ্বিতীয় উইকেটের জুটিটাও ভয় ধরাচ্ছিল। এবার দায়িত্ব নিলেন পুরোনো বলে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা তাসকিন। ইনিংসের ১৩তম তৃতীয় বলে ফেরালেন ভেরেইনাকে। তাসকিনের বলটা যদিও ভালো ছিল না। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করেন ভেরেইনা। বল তার ব্যাটে লেগে ভেঙে দেয় স্টাম্প। ১৬ বলে একটি চারে ভেরেইনা করেন ৯ রান।
৬৬ রানে ১ উইকেট থেকে ৮৩ রানে পাঁচ উইকেট! ১৭ রান তুলতেই নেই ৪ উইকেট। ভেরেইনার সঙ্গে বিদায় নেন আরো ৩ ব্যাটসম্যান। নিজের পরের ওভারেই তাসকিন ফেরান ওপেনার মালানকে। ডানহাতি পেসারকে একটু বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন মালান। অফ স্টাম্পের বাইরে বাড়তি বাউন্স পাওয়া ডেলিভারি তার ব্যাটে ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৫৬ বলে ৭ চারে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করেন ৩৯ রান।
পারিবারিক জটিলতায় জর্জরিত সাকিব ফেরালেন প্রতিপক্ষ অধিনায়কে। বাঁহাতি স্পিনারকে বেশ আগেই সুইপ করতে যান আভুমা। বল আঘাত হানে তার প্যাডে। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি বাভুমা। ১১ বলে করেন ২ রান। সাকিবের পর সাফল্য পান শরিফুল ইসলাম। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে প্রথম বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দিলেন রাসি ফন ডার ডুসেনকে। এই প্রোটিয়া করেন ৪ রান।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ডাক পেয়েও খেলতে না যাওয়া তাসকিন দেশের জন্য কতটা নিবেদিত তার প্রমাণ দিলেই মাঠেই। দ্বিতীয় স্পেলে দিরবি স্বাগতিকদের পরের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। একে একে ফেরান ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস (২০), ডেভিড মিলার (১৬) আর কাগিসো রাবাদাকে (৪)। রাবাদাকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেটের কোটা পূর্ণ করেন তাসকিন।
১২৬ রানে ৮ উইকেট হারানো দলটি শেষদিকে কেশভ মহারাজের ৩৮ বলে ২৭ রানের ইনিংসের কল্যাণে দেড়শ ছাড়ানো সংগ্রহ পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মহারাজ রান আউট হলে ৩৭ ওভারে ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। ম্যাচ জয়ের সঙ্গে সিরিজ সিরিজ জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৫৫ রান। রানের দুর্গ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া সেঞ্চুরিয়ানে এ লক্ষ্য টপকাতে বেগ পাওয়ার কথা নয় বাংলাদেশ দলের।
টাইগার বোলারদের মধ্যে ৯ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তাসকিন নেন ৫ উইকেট। সাকিব আল হাসানের সংগ্রহ ২ উইকেট। একটি করে পান শরিফুল আর মিরাজ।