আমি ছিলাম তোমাদেরই মাঝে
হেসেছিলাম একসাথে
উড়েছিলাম স্বপ্নীল আকাশে
কাঁদলেন তামিম, কাঁদালেন ভক্তদেরও।
বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের সাথে নিয়ে উড়ে ছিলেন স্বপ্নের আকাশে। সেই আকাশের সূর্য যেন অস্তমিত হলো চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইন এর কৃষ্ণচূড়া হলে।
ঠিক ১২ থেকে ১৩ বছর আগে পাড়ার ক্রিকেট থেকে শহরের অলিগলিতে ক্রিকেট খেলা শিশুরা চাইতেন তামিম হতে। ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে সবার চোখ থাকত তামিমের ব্যাটের দিকে। কতশত ম্যাচ খাদের কিনারে থেকে তুলে দলকে জিতিয়েছেন। একহাতে খেলে দলকে জেতানোর ছবি তো এখনো ফেসবুকে সরব। সেই তামিম নিজেকে গুটিয়ে নিলেন, অশ্রুসিক্ত চোখে নিজের মতো করে বিদায় জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে।
অশ্রুসজল চোখে বিদায়ের কথা জানিয়ে তামিম বলেন, `আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমি সব সময়ই একটা বলেছি, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করার জন্য।`
ক্রিকেট বিশ্বের অন্যান্য দল যখন বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় ব্যস্ত, ঠিক সে মুহূর্তে ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে দল দিয়েছেন অনেক কিছু।
মাত্র ১৮ বছর বয়সের এক যুবক বিশ্ব মঞ্চে জানান দিয়েছিলেন নিজের অস্তিত্বের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের ঘরের মাঠে এই সংস্করণেই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেন তামিম। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রায় ৩৭ গড়ে ৮৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি আছে ১৪টি, ফিফটি ৫৬টি।
টেস্টে ৭০ ম্যাচে প্রায় ৩৯ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৫১৩৪ রান। ৩১ ফিফটির সঙ্গে করেছেন ১০ সেঞ্চুরি। সবার আগে ছেড়ে দেওয়া টি-টোয়েন্টিতে ৭৮ ম্যাচে করেছেন ১৭৫৮ রান। দেশের একমাত্র সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৭টি ফিফটিও।
২০১৭ সালে সর্বপ্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তামিম। যদিও সেটা একটি টেস্টেই ছিল। ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্বও পান তিনিই। সব মিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে। অন্তত ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাফল্যের শতকরা হারে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনিই।
এই ক্যারিয়ারে নিশ্চিতভাবেই একটি বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে বিশ্বকাপ। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে তাঁর সেঞ্চুরি নেই। চারটি ফিফটিতে ৭১৮ রান করেছেন কেবল ২৪.৭৫ গড়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রান তাড়ায় ৯৫ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপে তার ক্যারিয়ার সেরা।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার পেরিয়ে তামিমের এভাবে বিদায় মেনে নিতে পারেনি ভক্তরাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে পোস্ট করেছেন অনেক তামিম ভক্ত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সংবাদ কর্মীরাও চোখের পানি ঝরিয়েছেন। বিদায় দিয়েছেন কাঁদতে কাঁদতে। বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে কেঁদেছেন টাইগার সোয়েব। টাইগার সোয়েবকে বিদায় দিয়ে গাড়ির জানালার কাঁচ তুলে হয়ত নিজেও কেঁদেছেন অঝোরে। তবুও বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মনে তামিম ছিলেন, আছেন, থাকবেন হিমালয় হয়ে।