প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি বাংলাদেশ বরাবরই প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে টানবে। সিলেট, হবিগঞ্জ,মৌলভীবাজার,সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়,কক্সবাজারের মতো জেলাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বরাবরই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পর্যটন খাত বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে। গত দুই বছর ধরে পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক লোকসানে মধ্যে পড়ে। এ বছর আবারও ঘুরে দাড়িয়েছে দেশের পর্যটন। এবার রেকর্ড সংখ্যাক পর্যটক জড়ো হয় ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য্য বেষ্টিত জেলা কক্সবাজারে।
বিশ্বের অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন। কারণ পর্যটন কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে রাজস্ব বৃদ্ধি করে এবং দেশের মোট আয় ও উৎপাদনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২০০৮-২০১৮ দশকে বিশ্বজুড়ে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে অর্থনীতিকে টেনে ধরবার অন্যতম হাতিয়ার পর্যটন। ২০২৭ সাল নাগাদ বিশ্ব জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ১১ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এ সুযোগকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
পৃথিবীতে বর্তমানে ১৪০ কোটিরও বেশি পর্যটক রয়েছে। এই সংখ্যা ২০২৫ সাল নাগাদ হবে ২০০ কোটি। গবেষণা বলছে, এই বিপুল পর্যটকের ৭৫ শতাংশ পর্যটক ভ্রমণের জন্য বেছে নেবে এভারেস্ট, তাজমহল এবং সুন্দরবনের সৌন্দর্যমন্ডিত এশিয়াকেই। সেখানেই বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে নিজের সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে এবারের বাজেট।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতে আছেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে মোট ১৬ লাখ ৪০ হাজার পর্যটক আসে। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ২৮ শতাংশ অনাবাসী বাংলাদেশি। বাকি ২ লাখ ৯১ হাজার জন বিদেশি পর্যটক।
হতাশার বিষয় হলো, ইনক্লুসিভ ডেভলপমেন্ট ইনডেক্সের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধির এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখানে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সাল জুড়ে আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ২৯৫, যার অধিকাংশ ভারতীয়।
বর্তমানে দেশে দেশে আবারও পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের চিরায়ত চারু ও কারুশিল্প, মৃত্তিকাশিল্প, তাঁতশিল্পকে কেন্দ্র করে এখনো জেলাভিত্তিক কোনো পর্যটন ব্যবস্থা দাঁড়ায়নি। এগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। অভ্যন্তরীণ পর্যটনে সফলতা আসলে গ্রামীণ নারীরাও তাদের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
ইতোমধ্যেই পুরো দেশকে আটটি পর্যটন জোনে ভাগ করেছে সরকার। এসব প্রকল্পে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এইখাতে বিনিয়োগ করে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হওয়ার মাধ্যমে দেশের পর্যটনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ এর প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাই হয়নি যে আমাদের দেশ এখন বিদেশি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত। যতক্ষণ না আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন আসবে তারা এটা পরিষ্কারভাবে বুঝবে না যে আমরা এখন বিদেশিদের স্বাগত জানাচ্ছি। আরেকটি বিষয় হলো- বাজেটে আমাদের প্রত্যাশা, এখনো পর্যটনকে শিল্প ঘোষণা না করায় আমরা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত। অনেক ট্যুর অপারেটর আছে যাদের ৬০-৭০ জন কর্মী আছে। তবে শিল্প ঘোষণা না করায় প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত।’
এ ট্যুর এসোসিয়েশনের নেতা বলেন, বান্দরবানসহ পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটক প্রবেশের ক্ষেত্রে ডিসি অফিসের অনুমোদন নেওয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল নিবন্ধন এ কার্যক্রমে জটিলতা কমাতে পারে বলে ধারণা তার। এছাড়া সুন্দরবন দেখতে আসা বিদেশী পর্যটকদের কাছ থেকে সাধারণ বাংলাদেশী পর্যটকদের তুলনায় ১০ হাজার টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগও করেন তিনি। এসব কারণে অনেকেই পর্যটনে আগ্রহ হারাচ্ছেন।