স্টেডিয়াম ভর্তি হাজার হাজার দর্শক। ব্যাটিং করতে নামলেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। অথচ তাঁর হয়ে চার ছক্কা হাঁকাচ্ছেন আপনি। সেটি আবার খেলছেন নিজের মোবাইলে ঘরে বা সুবিধামত কোথাও বসে। ‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ নামে এমনই এক মোবাইল গেমিং অ্যাপ নিয়ে আসছে কেপিসি এন্টারপ্রাইজ ও টারটল সলিউশনস।
দুই বছরের পরিকল্পনায় বাস্তবায়িত হয় গেমসটি
দুই থেকে আড়াই বছর চেষ্টার ফসল এই মোবাইল গেমস অ্যাপ। তবে মূল কাজ শুরু হয় গত মে মাসে। আটজন তরুণ প্রোগ্রামার গেমসটির প্রোগ্রামিংয়ের কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে উদ্যোগটিতে প্রাথমিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৬০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে অংশীদার হিসেবে আগামী দুই বছরের জন্য যুক্ত হয়েছেন স্বয়ং ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। তিনি এই মোবাইল গেমসটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তথা পণ্যদূত হিসেবেও কাজ করবেন।
শুক্রবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
শুক্রবার (১ অক্টোবর) মোবাইল গেমসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। তবে ১২ অক্টোবর থেকে গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে খেলা যাবে। আইফোনের গ্রাহকেরা সুবিধাটি পাবেন দুই মাস পর।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিকেতনে কেপিসি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয়ে দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে ‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কাজী সাজেদুর রহমান।
বেটা ভার্সনেই বাজিমাত
তিনি আরো জানান,‘হাউজ্যাট: মুশি দ্য ডিপেন্ডেবল’ মোবাইল গেমসটির একটি বেটা ভার্সন (পরীক্ষামূলক) ছাড়া হয়েছিল। এটি এক সপ্তাহে ৫০ লাখ বার দেখা হয়েছে। হাউজ্যাটের পূর্ণাঙ্গ ভার্সন এলে আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মধ্যেই ২৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ গ্রাহক পাওয়া যাবে, এমন প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারনে মুশফিক
মুশফিকুর রহিমই কেনো সেই প্রসঙ্গে কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, ‘তার সঙ্গে আমার অনেক দিনের বন্ধুত্ব। বেশ কিছুদিন আগে এক আড্ডায় নতুন কোনো উদ্যোগে সে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছিল। তো আমরা যখন গেমসটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছিলাম, তখন প্রথমই তার কথা মাথায় আসে। কারণ, বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও তার তারকাখ্যাতি রয়েছে। আর তার সম্পর্কে মানুষের মাঝে পজিটিভ চিন্তা রয়েছে। গত জিম্বাবুয়ে সফরের সময় এক রাতে আমি তাকে উদ্যোগটির কথা জানালাম। সে একবাক্যে রাজি হয়ে যায়।’
গেমসটি খেলায় টুর্নামেন্ট জিতলে কিংবা সর্বোচ্চ রান করলে মুশফিকের জার্সি, মুশফিকের অটোগ্রাফ–সংবলিত ব্যাট ইত্যাদি পুরস্কার দেওয়ার চিন্তা করছেন উদ্যোক্তারা। বিনামূল্যে গেমসটি খেলা যাবে। এ ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মূল আয়ের উৎস হবে বিভিন্ন কোম্পানির স্পনসরশিপ। ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যেমন বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন থাকে, গেমসটির ভার্চু্যয়াল মাঠেও তেমনটা থাকবে। ইতিমধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান স্পন্সরও হয়েছে।
ভাল কিছুর প্রত্যাশায় গেমসটি
এই গেমের টার্গেট অডিয়ান্স কে বা কারা এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী সাজেদুর রহমান বলেন, যারা গেমস খেলতে পছন্দ করে তারা। তবে এই অনলাইনে সবাই আসক্ত। এই গেমের মাধ্যমে ভালো কিছুই শিখবে আশা করি। যারা ক্রিকেট সম্পর্কে জানেন না তারাও জানতে পারবে এই গেমস খেলার মাধ্যমে।
শুরুতে সিঙ্গেল মোড রয়েছে
গেমের ফিচার সম্পর্কে কাজী সাজেদুর রহমান জানান, এটি শুরুতে সিঙ্গেল মোড গেম থাকবে। যদি বাংলাদেশকে নিয়ে খেলা হয় তাহলে মুসফিকুর রহিম সেখানকার স্টার প্লেয়ার। আবার চাইলে লিগ সিস্টেমেও খেলা যাবে। পরে আমাদের মালটি প্লেয়ার অপশন চলে আসবে।
কাজী সাজেদুর রহমান ২০১২ সালে তেজগাঁওয়ে পেপার কাপ উৎপাদনের জন্য কেপিসি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৬ সালে এসএমই ফাউন্ডেশনের বর্ষসেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুরস্কার পান তিনি। এই উদ্যোক্তা বললেন, ‘আমি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেছি। তাই প্রযুক্তি খাতের কোনো ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা ছিল। বেসরকারি আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করার সময় খান রিফাত সালাম স্যারের সঙ্গে পরিচয় হয়। স্যারের সঙ্গে প্রায়ই কথা হতো। স্যারও নতুন কিছু করার চিন্তাভাবনা করছিলেন। আমার ভাবনার সঙ্গেও মিলে গেল।’