আট বছর পর বিশ্বকাপে ফিরেই ‘কমলা ঝড়’, উড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ডিসেম্বর ৪, ২০২২, ০৫:৩৮ এএম

আট বছর পর বিশ্বকাপে ফিরেই ‘কমলা ঝড়’, উড়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র

আট বছর পর বিশ্বকাপে ফিরে ‘কমলা ঝড়’ তুলল ডাচরা। সেই ঝড়ে বিশ্বকাপে নক আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই নক আউট হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা ডাচ তারকা ডেনজেল ডামফ্রিস ৮১ মিনিটে গোল করতেই মাথায় হাত দেন যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বারহল্টার। খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে উপস্থিত মার্কিন দর্শকদেরও হাত তখন মাথায়। তাঁরাও বুঝতে পারলেন লড়াইটা আসলে সেখানেই শেষ। শুরুতে ২ গোলে পিছিয়ে পড়লেও চমকে ভরপুর বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল সবকিছু ভোজবাজির মতো উল্টে দিতে। কিন্তু তার আর হয়নি।

ম্যাচে দুটি গোলে এসিস্ট করে এবং নিজে একটি গোল করে মার্কিন শিবিরকে একেবারে গুড়িয়ে দেন ডেনজেল ডামফ্রিস।

এর আগে একটি গোল শোধ দিয়ে ম্যাচে অবশ্য ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সুযোগও ছিল ম্যাচে ফেরার কিন্তু সেই ফেরার রাস্তাটা বন্ধ করে দিয়েছিলেন ইন্টারমিলান স্টার এই ডেনজেল ডামফ্রিসই। দুই গোল করানো মিডফিল্ডার নিজে গোল করে নেদারল্যান্ডসকে সবার আগে তুলে দিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।

গতবার বাছাইপর্বের বৈতরণি পার হতে না পারায় নেদারল্যান্ডস এবার আলোচনার ধারে কাছেও ছিল না। সে কারণে অনেকটাই চাপমুক্ত ছিল তাঁরা। এখন তাঁরা কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল হেসে খেলেই। ফুটবলে নব্য কলোনি গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কাতারে আসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিজ্ঞতার মূল্য বুঝিয়ে দিল তাঁরা ৩-১ গোলের জয় দিয়ে।

এদিন তারুণ্যে ভরা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সেরা দলটাকেই ম্যাচের শুরু থেকে খেলিয়েছেন লুইস ফন গাল। উল্টোদিকে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিককে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র কোচ গ্রেগ বারহল্টার। তবে ম্যাচের আগে সুস্থ হয়ে একাদশে খেলেছেন চেলসি তারকা।

এই পুলিসিকই যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে দিতে পারতেন শুরুতেই। খেলার তৃতীয় মিনিটেই নেদারল্যান্ডসকে প্রায় চমকে দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সার্জিনো দেস্তের পাস থেকে তড়িৎ আক্রমণে ডাচদের অফসাইডের ফাঁদ ভাঙতে পারলেও গোলরক্ষককে হার মানাতে পারেননি পুলিসিক।

যুক্তরাষ্ট্র না পারলেও নিজেদের প্রথম সুযোগেই নিজেদের এগিয়ে রাখার কাজটা সেরে রেখেছে নেদারল্যান্ডস। ১০ মিনিটে প্রতি আক্রমণ থেকে বক্সের ডান প্রান্ত থেকে প্রথম সুযোগেই মেম্ফিস ডিপাইয়ের কাছে বল বাড়ান ডেনজেল ডামফ্রিস। অরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন ডিপাই। বল পাওয়া মাত্রই এক শটে বল জালে পাঠান বার্সা তারকা।

প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক দুই মিনিট আগে ডাচদের আবারও চমকে দিতে বসেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২৫ গজ দূর থেকে দ্রুত শট নিয়েছিলেন টিমথি উইয়াহ। অবশ্য সতর্কই ছিলেন ডাচ গোলরক্ষক আন্দ্রিস নোপের্ট। উইয়াহর শট ঠেকাতে কোনো সমস্যাই হয়নি ডাচ গোলরক্ষকের।

আক্রমণের পরেই দ্বিতীয় গোল হজম করে বসে যুক্তরাষ্ট্র। এবারও পাল্টা আক্রমণ থেকেই সাফল্য নেদারল্যান্ডসের। গোলের জোগানদাতা যথারীতি সেই ডামফ্রিস এবং প্রথম গোলের মতোই ডান প্রান্ত থেকে নিয়েছিলেন শট। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বক্সের ভেতর মেম্ফিস ডিপাইকে সামলাতে গিয়ে বক্সের মুখে বিশাল একটা শূন্যস্থান তৈরি করে রেখেছিল মার্কিনি রক্ষণভাগ। ডেলি ব্লিন্ডকে ছুটে আসতে দেখে সেখানেই বল পাঠান ডামফ্রিস। ব্লিন্ডের শটে বল জালে জড়ায় ঠিক প্রথম গোলের মতোই।

এই ডামফ্রিস আতঙ্ক ছড়িয়েছেন পরের অর্ধেও। ৫১ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে নেওয়া তার শট ফেরাতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালে বল প্রায় জড়িয়েই ফেলেছিলেন ওয়াকার জিমারম্যান। গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার সতর্ক থাকায় সে যাত্রায় রক্ষা যুক্তরাষ্ট্রের। ৭১ মিনিটে পরপর দুইবার ডাচ আক্রমণ ঠেকিয়ে ব্যবধানটা বড় হতে দেননি টার্নার।

সময়ের ব্যবধানে ম্যাচটা যখন হেলে যাচ্ছিল নেদারল্যান্ডসের দিকে তখনই খেলায় ফেরে যুক্তরাষ্ট্র। ৭৬ মিনিটে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের শট হাজি আমির রাইটের পায়ে লেগে ডাচ গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জড়ায় জালে।

এক গোল শোধ করে যখন ম্যাচে ফেরার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র তখন মার্কিনিদের সব আশা গুঁড়িয়ে এবার নিজেই গোল করে বসেন সারা ম্যাচ জুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো ডামফ্রিস। ৮১ মিনিটে ডেলি ব্লিন্ডের উড়িয়ে দেওয়া বলে মার্কিন রক্ষণ ভেঙে গোলরক্ষককে ফাঁকায় পেয়ে যান ডামফ্রিস। ডাচ নায়ক ঠান্ডা মাথায় পরিষ্কার করেন দলের শেষ আটে যাওয়ার পথটি। এই ডামফ্রিস আতঙ্ক পরখ করেই বাড়ির ফিরতি টিকিট কাটতে হল মার্কিনীদের।

 

Link copied!